শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া আর হাঁড় কাপানো কনকনে শীতে কাঁপছে দিনাজপুর। বিপর্যস্ত জনজীবন ও প্রাণিকুল। পৌষ মাসের শেষ প্রান্তে হিমালয়ের পাদদেশের সীমান্ত ঘেষা জেলা দিনাজপুরের জবুথবু অবস্থা।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দেশের সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ জেলায় মৌসুমের সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা।

বৃষ্টির মতো গুড়িগুড়ি শিশির পড়ছে। গত তিনদিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। দুপুরের পর একটু উঁকি মারলেও নিমিষেই তা নিভে যাচ্ছে। তীব্র শীতের কারণে প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না মানুষজন। সড়কে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় এবং কাজ না পাওয়ায় রোজগার কমেছে শ্রমজীবী নিন্ম আয়ের মানুষের । এতে বিপাকে পড়েছেন তারা।

গরম কাপড়ের অভাবে অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীরে গরম অনুভব করছে। তীব্র শীতের কারণে কাহিল অবস্থা শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মানুষের। শীতজনীত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল,অরবিন্দু শিশু হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে শীতজনীত রোগি বেড়েছে। এতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন এএইচএম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এ জন্য শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখাসহ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন,তারা।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আজ তাপামাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। যা দেশের সর্বোনিন্ম এবং জেলায় মৌসুমের সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা। মৃদু শৈত প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে জেলার উপর দিয়ে।


তবে শীত কমে ১৮ বা ১৯ জানুয়ারি জেলায় বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে দিনাজপুরের শ্রমবাজার হিসেবে খ্যাত ষষ্টিতলায় কাজের সন্ধানে অপেক্ষামান জেলার বিরল উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বাহোইল গ্রামের শাহজাহান আলী (৬০) বলেন, ‘ ঠান্ডাত অবস্থা কাহিল খুবই কাহিল বাপু।কাম-কাইজ নাই।বসি আছি। পেটের তাগিদে বাহির হইছি। পাইসা-কড়ি না থাকায় এইবার গরম কাপড় কিনা হইনি। খুব কষ্টে দিন কাটেছে বাপু। পারলে এগনা কম্বল- টম্বল দিয়া সাহায্য করেন।'

কাজের সন্ধানে আরেক অপেক্ষামান নারী নির্মাণ শ্রমিক শহরের হঠাৎপাড়া এলাকার মোহেচেনা বেগম (৪২) জানায়, ঠান্ডার কারণে ঠিকমতো কামকাইজও করা যায় না। কাম না করিলে টাকা দিবে কে? গরিব মানুষের বাঁচার উপায় নাই।যে তরিতরকারির দাম।কাছেই ভিড়া যায় না। খাবো,না গরম কাপড় কিনবো? এই শীতে কেমন করে বাঁচবো আল্লাহই জানে।’

বীরগঞ্জর নিচপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৪৫)বলেন, ‘ হিমেল বাতাস আর ঠান্ডায় হাত-পা ককড়া লেগে বরফ হয়ে যাচ্ছে। গরু-ছাগলও বাড়ির বাইর করা যাচ্ছে না। প্রাণিকুলের অবস্থাও কাহিল।'

(এসএএস/এএস/জানুয়ারি ১৩, ২০২৪)