প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে পৌষ সংক্রান্তিতে লাঠিয়ালের পাঠে মহাদেব পূজা ও পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৫ জানুয়ারী) সকাল ৯টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন মহাদেব পূজার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রংপুর জেলা শাখার সভাপতি বাবু রাম জীবন কুন্ডু। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্দিরের সভাপতি পরেশ রায় ও সাধারন সম্পাদক বিবেকানন্দ পাটোয়ারী এবং অধির চন্দ্র রায়। রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের ছিনাই ইউনিয়নের মীরের বাড়ী এলাকায় লাঠিয়ালের পাঠ নামক স্থানে মহাদেবের পাঠে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে মহাদেব দেব পূজা ও পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মহাদেব পূজায় হাজার হাজার সনাতনী ভক্ত এবং দর্শনার্থীরা অংশগ্রহন করেন।

কথিতে আছে, বহু বছর আগে এই লাঠিয়ারের পাঠে মহাদেব পূজা অনুষ্ঠিত হতো। কালক্রমে তা বিলীন হয়ে যায়। সেখানে ঢিল খাওয়া ঠাকুর (দেবতা) অবস্থান করতো। মানুষ এ পাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে কিংবা যানবাহনে গেলেও সেখানে ঢিল দিয়ে যেত। তারপরও ওই এলাকায় মানুষ ভয় পেত। সেখানে ভয়ংকর জীবজন্তু সহ বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক কিছু দেখতে পেত। সে কারণে ওই সড়ক দিয়ে মানুষের যাতায়াত ছিল খুবই কম। পরে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক হয়। ঢিল খাওয়া ঠাকুরের পাঠ থাকায় ওই স্থানে মহাসড়কটি একটি ধনুকের মতো বাঁকা করে নেয়া হয়।

দুর্ঘটনায় কবলিত বাস- ট্রাকের ড্রাইভাররা বলেন, লাঠিয়ালের পাঠে গাড়ী নিয়ে আসলে সেখানে সাত রাস্তার সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে মাঝ রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালালে দূর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে। আবার অনেককে বলতো শোনা যায়, এখানে গাড়ী নিয়ে আসলে গাড়ী শূণ্যে চলে যায়। এ রকম অনেক অলৌকিক ঘটনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানার পর ওই এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা লাঠিয়ালের পাঠে মহাদেব পূজার আয়োজন করে। ধীরে ধীরে সেখানে দূর্ঘটনা কমতে থাকে। এখন তেমন দূর্ঘটনা হয় না বলে ওই এলাকার লোকজন দাবী করেন।

পূজা দিতে আসা মহামায়া নামের ভক্ত বলেন, মানস করেছিলাম তা পূণ্য হয়েছে। তাই পূজা দিতে এসেছি। দুর-দুরান্ত থেকে আমার মতো অনেকে এসেছেন। সে কারণে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ পূজা ও পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

লাঠিয়ালের পাঠ মন্দিরের মাহাদেব পূজার ব্রাক্ষণ ব্রজ গোপাল বলেন, মন্দিরে জায়গা সংংকুলান হয় না। এখানে অনেক পুজারী ও ভক্ত। তাই ভক্তরা সঠিকভাবে মহাদেব ঠাকুরকে পুস্পাঞ্জলী ও পূজা দিতে পারছে না।

লাঠিয়ালের পাঠ মন্দির পূজা কমিটির সভাপতি পরেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক বিবেকানন্দ পাটোয়ারী বলেন, এখানে জায়গা সংকট। তারপরও মন্দিরে বিশাল আকারে পূজা হয়ে আসছে। হাজার হাজার সনাতনী ভক্ত ও দর্শনার্থী এখানে ভিড় করে মেলা বসায়। তাই সরকারের কাছে দাবী সরকারীভাবে আর্থিক সহযোগীতা আসলে মন্দিরের জায়গা প্রসারিত করে বিশাল আকারে পূজার ব্যবস্থা করা যেত।

(পিএস/এসপি/জানুয়ারি ১৫, ২০২৪)