শরীয়তপুর প্রতিনিধি : গেল বর্ষায় স্কুলটি বিলীন হয়ে গেছে সর্বগ্রাসী পদ্মা গর্ভে। বিপন্ন হতে চলেছে সুবিধাবঞ্চিত দুর্গম চরাঞ্চলের অন্তত ৩ শত শিশু শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। বিপুল পরিমান এই শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা সামনে রেখে একা পুরো স্কুলের ৬টি শ্রেনী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন একমাত্র নারী শিক্ষক মানসুরা বেগম। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্কুল বিলীন হওয়ার পর থেকে একদিনের জন্যও ক্লাসে যায়নি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে বেতন তুলছেন বাড়ি বসে।

ঘটনাটি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের ৭৭ নং চরমাদারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, পদ্মার অব্যাহত ভাঙ্গনের কবলে পরে স্কুলটি বিলীন হতে চললে গত আগষ্ট মাসে গোসাইরহাট উপজেলা প্রশাসন স্কুল ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেয়। নিলাম খরিদ দাতা স্কুল ভবন ভেঙ্গে নেয়ার পর পরই নদী গর্ভে বিলীন স্কুলের জমি-ভিটে সব। এরপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি বিলীন হওয়া স্কুলের ৫ শত গজ পশ্চিমে চরমাদারিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশে এসএমসির সভাপতির নিজ জমিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে টিন দিয়ে ৬০ ফিট লম্বা দোচালা একটি অস্থায়ী স্কুলঘর নির্মাণ করেন। সেখানেই ঠাই হয় ২ শত ৮০ জন শিক্ষার্থীর। গত ৩০ আগষ্ট থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু হয় নতুন ঘরে। কিন্তু এখানে স্কুল চালাতে বাধ সাধেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোফাচ্ছেল হোসেন। তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তা নিয়ে এক কি.মি দুরে ভিন্ন একটি স্থানে স্কুল চালাতে চাইলে শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে ক্লাস করতে রাজি হয়নি। বিষয়টি এক পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটি পর্যন্ত গড়ালে কমিটি নতুন স্থানে ঘর তুলে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।

প্রাথমিক স্কুল সমাপনী ও বার্ষিক পরীক্ষা সামনে রেখে দুইটি স্থান নিয়ে টানাটানি এড়াতে এসএমসির সভাপতি আদালতের আশ্রয় গ্রহন করেন। আদালত সবকিছু বিবেচনায় রেখে নবনির্মিত গৃহে স্কুল কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক মোফাচ্ছেল স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। জানা গেছে, ৭৭ নং চরমাদারিয়া স্কুলটি ভেঙ্গে ফেলার পূর্বে এখানে ৪ জন শিক্ষক কর্মরত ছিলেন। ইতিমধ্যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবু বকর শরীফ অবসরে চলে যান। স্কুলের অপর সহকারী শিক্ষক ফারুখ ইসলামকে প্রেষনে বদলি করা হয় আরেকটি স্কুলে। বর্তমানে সহকারি শিক্ষক মানসুরা বেগম পৌনে ৩ শত জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একা বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সামনে পরীক্ষার কারনে স্কুল পরিচালনা কমিটি একমাস আগে গোসাইরহাট কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী আমেনা আক্তারকে খন্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।

সহকারি শিক্ষিকা মানসুরা বেগম বলেন, আমি ১৯৮৬ সাল থেকে এই স্কুলে শিক্ষকতা করি। গত আগষ্ট মাসে স্কুলটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নতুন একটি টিনের ঘরে আড়াই মাস যাবৎ ক্লাস শুরু করেছি। আমরা চারজন শিক্ষক একসাথে কাজ করতেছিলাম। প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর অপর একজনকে প্রেষনে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। হঠাৎ করে আগষ্ট মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি প্রায় ৩ শত শিক্ষার্থীকে নিয়ে স্কুল পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছি। একজন খন্ডকালিন শিক্ষক না থাকলে ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হতো না।

স্কুলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোফাচ্ছেল হোসেন বলেন, আমি কেন স্কুলে যাইনা এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় ভালো জানেন। তারা যেভাবে থাকতে বলেছেন আমি সেবাবেই থাকছি।

গোসাইরহাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোখলেছুর রহমান বলেন, আমি বড় অসহায়, আমাকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন জবাব দিতে পারবোনা। তবে আমি মোফাচ্ছেল হোসেনকে নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেছি।

(কেএনই/এটিআর/নভেম্বর ১২, ২০১৪)