স্টাফ রিপোর্টার : বন্দিকে ডান্ডাবেড়ি পরানো নিয়ে যে তথ্য বাইরে রয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক। তিনি জানান, ডান্ডাবেড়ি মূলত পুলিশ দেয়, এখানে কারাগারের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কমিটির সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা জানান কারা মহাপরিদর্শক।

আইজি প্রিজন্স বলেন, ডান্ডাবেড়ি কে দেয়? এটা পুলিশ দেয়। পুলিশ বন্দিকে যখন কারাগার থেকে বুঝে নেয়, তখন ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, অথচ লেখালেখি হয় জেলখানায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক নয়। পুলিশের রিক্রুইজেশন অনুযায়ী পরিয়ে দেওয়া হয়, কারণ ডান্ডাবেড়ি থাকে কারাগারে।

একজনের নাম দিয়ে অন্যজন কারাগারে যাওয়ার উপায় নেই বলে জানান আইজি প্রিজন্স।

তিনি বলেন, কারাগার থেকে জামিন নিয়ে নানা গল্প রয়েছে। তবে এগুলো ঠিক নয়। আপনারা (সাংবাদিক) কারাগারে গেলে দেখতে পারবেন, প্রতিটি কারাগারে দুটি বড় বড় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড রয়েছে। একটি বোর্ডে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন তথ্য জানতে পারেন। আরেকটি থাকে কারাগারের ভেতরে। এতে সুবিধা হচ্ছে যে, কার জামিন হয়েছে, এটা আসা মাত্র ডিসপ্লেতে দেখানো হয়। যে আত্মীয় নিতে আসছেন উনিও দেখতে পান। আর যে বন্দি রয়েছেন তিনিও জানতে পারেন যে তার জামিন হয়েছে। এই যে জবাবদিহিতার কালচার, তা চেষ্টা করছি আমাদের মতো করে সাজানোর।

এনটিএমসির সঙ্গে সমন্বয় করে একটি ডেটাবেজ তৈরি হয়েছে জানিয়ে আইজি প্রিজন্স আনিসুল হক বলেন, একজন বন্দি যখন জেলখানায় প্রবেশ করেন, তখন তার ফিঙ্গার প্রিন্ট, আইরিস ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এন্ট্রি করা হয়। সুতরাং আয়নাবাজি নিয়ে যে সিনেমা দেখেছি যে, একজনের নামে আরেকজন…এটা আর নেই।

কারাবন্দিদের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ মনোযোগী জানিয়ে তিনি বলেন, জনবল বৃদ্ধির দিকেও আমরা মনোযোগী। প্রায় পাঁচ হাজার জনবল পাইপলাইনে রয়েছে রিক্রুট করার জন্য।

কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রাজশাহীতে নির্মাণ হয়েছে, আর কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি কেরানীগঞ্জে বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আইজি প্রিজন্স বলেন, কয়েদি থেকে হাজতি বন্দি কয়েকগুণ বেশি। বর্তমানে কয়েদি বন্দি প্রায় ২০ হাজারের মতো। আর হাজতি ৫৫-৬০ হাজারের মতো।

বন্দিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন থেকে শুরু করে তাদের সমাজে পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক।

বন্দিদের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ৩৮টি কারাগারে ৩৯টি ট্রেডে বন্দিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। হস্তশিল্প থেকে শুরু করে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের পক্ষে যা এফোর্ট করা সম্ভব।

কারা মহাপরিদর্শক আরও বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বন্দি যখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যান, তখন এই প্রশিক্ষণ থেকে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।

তিনি বলেন, একটি হিসাবে আছে যে, এ পর্যন্ত বন্দিদের দেড় কোটি টাকা মজুরি হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ৫০ শতাংশ লাভ বন্দিদের দেওয়া হয়, আর বাকি ৫০ শতাংশ কাঁচামাল কেনার কাজে ব্যবহার হয়।

৩৮টি কারাগারের কর্ম অধিদপ্তর থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হয় বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক। এছাড়া সব কারাগারকে সেন্ট্রাল মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে বলে উল্লেখ করেন।

এসময় ক্র্যাব সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সহ-সভাপতি শাহীন আবুদল বারী, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক হরলাল রায় সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রাজী, দপ্তর সম্পাদক কামাল হোসেন তালুকদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিহাল হাসনাইন, প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক ইসমাঈল হুসাইন ইমু, ইসি সদস্য আলী আজম ও কালিমউল্ল্যাহ নয়ন উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ৩১, ২০২৪