গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : নয় দফা দাবিতে একাডেমিক ভবনের তালা বন্ধ করে আন্দোলন করেছে গোপালগঞ্জের শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল দশটা থেকে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রধান ফটোকে তালা বন্ধ করে তারা এ আন্দোলন করেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন দাবি আদায় না হলে তারা একাডেমিক সকল কার্যক্রম বন্ধ করে বৃহৎ আন্দোলনে যাবেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি সমূহ হচ্ছে, এক, ক্যাম্পাসের সকল শিক্ষার্থীদের যেকোনো ধরনের সমস্যার নিষ্পত্তি কেবল সম্মানিত শিক্ষকদের উপস্থিতিতেই করতে হবে। সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী ব্যতিত অন্য কেউ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবে না। হল কেন্দ্রিক এবং ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক সকল বাজেটের সঠিক বন্টন এবং সুস্পষ্ট হিসাব চাই।

আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে ক্যাম্পাসে ক্যান্টিন দিতে হবে। ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয় সকল ক্লাব (স্পোর্টস-ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, রিসার্স ক্লাব ইত্যাদি) এর কার্যক্রম শুরু করতে হবে। ক্যাম্পাসের যথার্থ বিশুদ্ধ খাবার পানির চিরস্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে । ক্যাম্পাসের সম্ভোধন বিষয়ক চার্ট নোটিশ আকারে প্রকাশ করতে হবে। ছাত্র হোস্টেলের কে,সি গেইট সার্বক্ষণিক ভাবে খোলা রাখতে হবে। প্রত্যয়নপত্র সহ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত সকল অর্থের রশিদ প্রদান করতে হবে। সকল ধরণের একাডেমিক চার্জের পরিমান উল্লেখ করতে হবে।

এ দাবিগুলো যতদিন না পূরণ হবে, ততোদিন পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বর্জন করা হবে।

বুধবার বেলা ২টায় গোপালগঞ্জের শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে আন্দোলন করছে। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন এবং বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি তাদের দাবিসমূহ ওই কলেজ প্রধানের এসেই শুনতে হবে এবং এই আন্দোলন স্থলে বসেই তাদের এই সমাধান দিতে হবে। অন্যদিকে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নয়ন চন্দ্র ঘোষ বোনের বিয়ে উপলক্ষে ছুটিতে ছিলেন। আন্দোলনের কথা জানতে পেরে তিনি বরিশাল থেকে তাৎক্ষণিক গোপালগঞ্জে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে বিকাল ৩ টায় বসেন। পরে শিক্ষার্থীদের এই দাবিসমূহ মেনে নিলে শিক্ষার্থীরা বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় ।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কার্যক্রম শুরু করে। ওই বছর প্রথম ব্যাচে ১১৪ জন দ্বিতীয় ব্যাচে ১২০ জন ও তৃতীয় ব্যাচে ১২৩ জনসহ মোট ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমান ৩৫৭ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

কলেজ সূত্রে আরো জানা যায় ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩৮ টি কিন্তু সেখানে শিক্ষক রয়েছে আট জন। এর মধ্যে তিনজন বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয় অন্যত্র চলে যাবেন।

অফিস সহায়ক ও অফিস সহকারী অনুমোদিত পদ ৩৬ টি থাকলেও রয়েছে ৮ জন এবং আউটসোর্সিংয়ে রয়েছেন ১১ জন যেখানে থাকার কথা ১৪ জন। জনবল সংকট থাকায় কলেজটির নানামুখি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, কলেজের দুই একজন স্টাফ শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করে। মূলত এ থেকেই সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ। অধ্যক্ষ বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে এসে আমাদের দাবি সমূহ মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করি।

শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নয়ন চন্দ্র ঘোষ বলেন, আজ সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনের তালা বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করে। তবে তারা যে নয়টি দফা দিয়েছে কিছু যৌক্তিক এবং কিছু অযৌক্তিক। তাদের দেওয়া যৌক্তিক দাবিসমূহ আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই সমাধান করবো। এ প্রতিশ্রুতি দিলে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।

(এমএস/এএস/জানুয়ারি ৩১, ২০২৪)