রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : স্ত্রী ও ১১ মাসের সন্তানকে বাড়িতে রেখে ২০১৬ সালের মার্চ মাসের শেষে চলে যান সাতক্ষীরা সদরের লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা তালতলার শফিকুল ইসলাম। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে  স্বামী শফিকুলের ফোন পেয়ে সন্তানকে নিয়ে চলে যান স্ত্রী জেসমিন নাহার। এরপর থেকে জামাতা ও মেয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। এত বছরেও জামাই, মেয়ে ও নাতির সন্ধান না পেয়ে এনজিও এবং আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার অফিসে ছুটে বেড়াচ্ছেন আশাশুনি উপজেলার নাকতাড়া বকচরা গ্রামের শাহানাজ পারভিন।

বুধবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের একটি বেসরকারি সংস্থার অফিসে বসে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নাকতাড়া বকচরা গ্রামের আজিজ গাজীর স্ত্রী শাহানাজ পারভিন জানান, এক সময় তাদের এলাকা থেকে মাছ কিনে শহরে বিক্রি করতো সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা তালতলা গ্রামের নিজামউদ্দিন কারিকরের ছেলে শফিকুল ইসলাম। পরিচয় সূত্রে ২০১৪ সালের ৩ জুলাই শফিকুলের সঙ্গে অষ্টম শ্রেণীর পড়–য়া তার মেয়ে জেসমিন নাহারের বিয়ে দেন তিনি। ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল শফিকুল- জেসমিন দম্পতির আব্দুল ছমি নামের এক সন্তান হয়। শমির বয়ম ১১ মাস হলে সন্তান ও স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে চলে যায় শফিকুল। এক মাস না যেতেই মেয়ে ও নাতিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। দেড় বছর রাখার পর সংসারে অভাব অনটনের জন্য শ্বশুর বাড়িতে চলে যায় জেসমিন। শ্বশুর বাড়িতে থেকে সে পার্শ্ববর্তী গরুর খামারে গোবর পরিষ্কার করাসহ বিভিন্ন জায়গায় দিনমজুরের কাজ করতো। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শফিকুলের মোবাইল পেয়ে জেসমিন তার ছেলে ছমিকে নিয়ে চলে যায়। নিজের দুইবার দুর্ঘটনার কারণে জামাতা, মেয়ে ও নাতিকে খোঁজার ব্যাপারে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারেননি বলে দাবি করেন শাহানাজ পারভিন।

শাহানাজ আরো জানান, মেয়ে জামাতা ও নাতির সঙ্গে বেহাই বাড়ির কারো যোগাযোগ আছে কিনা জানতে তিনি গত সোমবার মাগুরার তালতলায় যান। সেখানে যেয়ে তিনি জানতে পারেন যে দীর্ঘ আট বছর শফিকুল ও পাঁচ বছর জেসমিন তাদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি। এমনকি তারাও চেষ্টা করে তাদের সন্ধান পাননি। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সদর থানায় জামাতা, মেয়ে ও নাতিকে ফিরে পেতে ধর্না দিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে শফিকুলের ভাই ভ্যান চালক বাবর আলী জানান, তাদের ভাই শফিকুল আট বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তার মা রহিমা খাতুনের কাছে থেকে ভাবী জেসমিন ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী আতিয়ারের গরুর ফার্মে মাঝে মাঝে গোবর পরিষ্কারসহ বিভিন্ন স্থানে দিনমজুরের কাজ করতো। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ভাই শফিকুলের ডাকে ছেলেকে নিয়ে চলে যায়। এরপর থেকে শফিকুল, তার স্ত্রী ও তাদের সন্তানের সঙ্গে কোনপ্রকার যোগাযোগ ছিল না তাদের। এ ঘটনায় তারা এত বছরে থানায় কোন সাধারণ ডায়েরি করেননি।

এ ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থা স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত জানান নিখোঁজ থাকার এত বছরেও দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন সাধারণ ডায়েরি না করা তাকে হতাশ করেছে। তাই তিনি সদর থানায় বিষয়টি জানানোর জন্য শাহানাজ পারভিনকে পরামর্শ দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মহিদুল ইসলাম জানান, শাহানাজ পারভিন তার মেয়ে সর্বশেষ কোন জায়গা থেকে চলে গেছে তা জানাতে পারেননি। তাই তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা বা কোন অভিযোগ করার বিষয়ে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেইসব বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে পুলিশ সাধারণ ডায়েরী নিয়ে তদন্ত শুরু করবে।

(আরকে/এএস/জানুয়ারি ৩১, ২০২৪)