রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই ঘের কর্মচারিকে নির্যাতনের পর মালিককে বাড়ি থেকে তুলে এনে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন হরিণখোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ ও আহত চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন, পাটকেলঘাটা থানাধীন হরিণখোলা গ্রামের অভিরাম মণ্ডলের ছেলে অলঙ্গ মণ্ডল (৬১), তার ভাই জগদীশ মণ্ডল (৪৫), ঘেরের পাহারাদার বীরেন্দ্রনাথ মণ্ডলের ছেলে বিশ্বনাথ মণ্ডল (৫৩) ও ঘেরকর্মচারি আসননগর গ্রামের নারদ মুণ্ডার ছেলে শ্রীপদ মুণ্ডা (৩০)।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাটকেলঘাটা থানাধীন হরিণখোলা গ্রামের বিশ্বনাথ মণ্ডল জানান, তিনি তাদের প্রতিবেশি অলঙ্গ মণ্ডলের চিংড়ি ঘেরের পাহারাদার হিসেবে প্রতিদিনের ন্যয় রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি থেকে খেয়ে ঘেরের বাসায় আসেন। ঘুমিয়ে থাকার একপর্যায়ে আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুখোশধারী ৭/৮জন সন্ত্রাসী তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে মালিক অলঙ্গ মণ্ডল কোথায় জানতে চায়। তিনি জানেন না বলায় ঘেরে চোর ধরা হয়েছে মর্মে তাকে ফোন দিয়ে আসতে বলা হয়। রাজী না হওয়ায় তাকে বেঁধে ফেলে এলেঅপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করা হয়। প্লাস দিয়ে তার হাতের ও পায়ের আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার চেষ্টার পাশাপাশি দুই পায়ে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। এরপরপরই পার্শ্ববর্তী দীলিপ মণ্ডলের ঘেরের পাহারাদার শ্রীপদ মুণ্ডাকে ডেকে তুলে তাকেও মারপিট শেষে দু’জনকে নিয়ে অলঙ্গ মণ্ডলের বাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। অলঙ্গ মণ্ডলকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বলা হয়।

অলঙ্গ মণ্ডল জানান, হরিণখোলা বিলে নিজের আট বিঘা, ১২ বিঘা খাস জমিসহ বাকী জমি লীজ নিয়ে ১০০ বিঘা জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চিংড়ি ঘের পরিচালনা করে আসছেন। কয়েক বছর যাবৎ তিনি যুগিপুকুরিয়ার আব্দুস সোবহানেকে তার আট বিঘা জমি ও সরকারি চার বিঘা খাসজমি বাবদ লীজের টাকা দিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি একই গ্রামের তিলক মণ্ডলের ছেলে স্বপন মণ্ডল সোবহানের দখলীয় চার বিঘা খাস জমি কাগজপত্রের আলোকে তার বলে দাবি করেন। সে কারণে ২০২২ সাল থেকে ওই চার বিঘা জমির লীজের টাকা স্বপনকে দিয়ে আসছেন তিনি। একপর্যায়ে ২০২২ সালে সোবহান ওই চারবিঘা খাস জমি হরিণখোলা গ্রামের কার্তিক মÐলকে লীজ দিলে বিপত্তি বাঁধে। গত ১১ জানুয়ারি ওই জমি দখল না করতে পেরে বাড়িতে এসে হামলা করে কার্তিক, তার ছেলে ও কার্তিকের ভাই বিমলের ছেলেরা। হামলায় তিনি ও জগদীশ জখম হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়। এ মামলায় আনন্দ মণ্ডল নামের একজন সাত দিন জেল হাজতে ছিলো।

অলঙ্গ মণ্ডল আরো জানান, বাড়ির পাঁচ শতক জমি ও রাস্তা নিয়ে কাকাতো ভাই শিব শেখর মণ্ডলের সঙ্গে তাদের বিরোধ রয়েছে। জমি নিয়ে কার্তিক মÐল ও শিব শেখরের সঙ্গে তাদের আদালতে দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলা রয়েছে কয়েকটি। স্থানীয় ও প্রশাসনের মাধ্যমে কয়েকবার শালিসি বৈঠকও হয়েছে। এসব নিয়ে শিবশেখর ও কার্তিকের সঙ্গে উত্তেজনা চলে আসছিল।

অলঙ্গ মণ্ডল আরো জানান, রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঘের কর্মচারি বিশ্বাথ মণ্ডল ও শ্রীপদ মুণ্ডাকে কয়েকজন সন্ত্রাসী হাতে সটগান নিয়ে তার বাািড়র সামনে আসে। ঘের কর্মচারির ডাকে তিনি বাড়ির বাইরে না আসতে চাইলে ঘর লক্ষ্য করে কয়েক রাউণ্ড গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। পরে তিনি বাড়ির বাইরে এলে তাকে লক্ষ্য করে তিন রাউণ্ড গুলি করা হয়। তাকে নিয়ে আসা হয় রাস্তায়। চিৎকার শুনে ভাই জগদীশ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে রাস্তায় তার ডান উরুতে গুলি চালানো হয়। পরে তার বুকে গুলি চালাতে গেলে সট গানের নল ধরে ফেলে ধ্বস্তাধ্বস্তির একপর্যায়ে তার দুই উরুতে গুলি লাগে। তার মেয়ে সুবর্ণা মণ্ডল ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ও তিনটি অব্যবহৃত সর্ট গানের গুলি তার বাড়ির উঠান থেকে জব্দ করে। ঘটনার পরপরই এম্বুলেন্সে তাদেরকে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ব্যাপারে হরিণখোলা গ্রামের কার্তিক মণ্ডল বলেন, পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে এ ধরণের নাটক সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনা সম্পর্কে লোকমুখে জেনেছেন বলে জানান শিবশেখর মণ্ডল।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মাহফুজুর রহমান ও অর্থোপেডিকস সার্জন ডাঃ হাফিজুল্লাহ জানান, অলঙ্গ মণ্ডলের দুই উরুতে ও জগদীশ মÐলের ডান উরুতে গুলি লেগে বিপরীত দিক থেকে বেরিয়ে গেছে।

পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ সোমবার সকালে জানান, জমি ও ঘের নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া অলঙ্গ মণ্ডলের মেয়ে সুবর্ণার স্বামীর সঙ্গে বিরোধ থাকায় জামাতা রিটন মণ্ডলকে দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়। এতেও রিপনের ক্ষোভ রয়েছে শ্বশুর অলঙ্গ মণ্ডলের উপর। তবে গুলির ঘটনা ঠিক নয় বলে তিনি দাবি করে বলেন, যথাযথ লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪)