স্টাফ রিপোর্টার : ফোরজি তরঙ্গের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) দুই গবেষক। ইঁদুরের ওপর পরিচালিত এ গবেষণায় বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অর্থায়নে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

গবেষক দুজন হলেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের এনাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক ডা. ইমাম হাসান।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তার গবেষণার বিষয়ে বলেন, সুইস এলবিনো মাইস জাতের ২১টি ইঁদুরকে প্রথমে তিনটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দল বাদে দ্বিতীয় দলে দৈনিক ৪০ মিনিট ও তৃতীয় দলে দৈনিক ৬০ মিনিট করে ২৪০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ টানা দুই মাস প্রয়োগ করা হয়। তরঙ্গের উৎস হিসেবে একটি ফোরজি মোবাইল কলিং অবস্থায় ইঁদুরগুলোর কাছাকাছি রাখা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ফোরজি তরঙ্গের প্রভাবে ইঁদুরগুলোর মধ্যে বিষণ্নতা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি রক্ত, শুক্রাশয়, যকৃত, বৃক্ক ও মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

ইঁদুরের বিষণ্নতা পরীক্ষা করার জন্য এলিভেটেড প্লাস মেজ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা সারাবিশ্বে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি।

অধ্যাপক রফিকুল বলেন, এলিভেটেড প্লাস মেজ যন্ত্রের উন্মুক্ত ও বদ্ধ দুটি বাহু থাকে। যেসব ইঁদুর বিষণ্নতায় ভোগে সেগুলো উন্মুক্ত বাহুতে খুব কম যাতায়াত করে। দ্বিতীয় দলের ইঁদুরগুলো খুব বেশি সময় উন্মুক্ত বাহুতে যাতায়াত করেনি। তৃতীয় দলের ইঁদুরগুলোর ক্ষেত্রে উন্মুক্ত স্থানে যাওয়ার প্রবণতা আরও কম।

তিনটি দলের ইঁদুরের রক্ত, শুক্রাশয়, যকৃত, বৃক্ক ও মস্তিষ্কে পরিবর্তন নির্ণয় করতে গবেষণাগারে হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা করা হয়। গবেষকরা বলছেন, তরঙ্গ সহ্য করা দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলের ইঁদুরের রক্তের গঠন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ পরিবর্তন হয়েছে। শুক্রাণু সৃষ্টিকারী সেমিনিফেরাস নালিকার আকার বড় ও কোষ বিকৃতি হয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে পুরুষত্বহীনতার দিকে ধাবিত হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলের ইঁদুরে যকৃতের কেন্দ্রীয় নালিকায় রক্তক্ষরণ হয়েছে, মূত্র সৃষ্টিকারী বৃক্কের গ্লোমেরুলাস সংকুচিত হয়ে গেছে। মস্তিষ্কের স্মৃতিধারণকারী হিপ্পোক্যাম্পাস অংশের কোষের সংখ্যা কমে যাওয়াও প্রমাণিত হয়েছে এ গবেষণায়।

গবেষক রফিকুল ইসলাম বলেন, তৃতীয় দলের ইঁদুরে নেতিবাচক প্রভাবের মাত্রা দ্বিতীয় দলের তুলনায় বেশি। প্রথম দলের ইঁদুরে তরঙ্গ প্রয়োগ না করায় উপরোক্ত অঙ্গগুলো স্বাভাবিক ছিলো।

মানুষের জন্য ফোরজি তরঙ্গ কতটুকু নিরাপদ—এমন প্রশ্নের জবাবে এ অধ্যাপক বলেন, গবেষণাটি কেবল ইঁদুরের ওপরই করা হয়েছে। আরও বৃহৎ পরিসরে গবেষণা করলে মানুষের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে জানা যাবে।

অধ্যাপক রফিকুল গবেষণাটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেনে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ব্রেইন রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (আইবিআরও) এক সম্মেলনে উপস্থাপন করেন এবং বেশ সাড়া পান।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪)