ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : সাদা নয়, হলুদ আর বেগুনীতে রঙ্গীন হয়েছে কৃষকের ক্ষেত। হলুদ বা বেটা ক্যারোটিনা, বেগুনি বা ভেলেনটিনা এ দুই জাতের রঙীন ফুল কপি চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কৃষক শফিকুল ইসলাম। ঈশ্বরদীতে তিনিই প্রথম এই রঙীন জাতের ফুল কপি চাষ করেছেন। শফিকুলের রঙ্গীন ফুলকপি দেখতে প্রতিদিন তার জমিতে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। শখের বসে কেউ কেউ জমি থেকেই কিনছেন এই সুস্বাদু রঙীন ফুল কপি।

জানা গেছে, অতিরিক্ত পরিমাণে বেটা ক্যারোটিনের কারণে ফুলকপি হলদে ও কমলা রঙের হয়। এই রঙের সবজিতে অন্য রঙের সবজির তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি ভিটামিন ‘এ’ উপাদান থাকে। আবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্থোসিয়ানিন্সের উপস্থিতির কারণে ফুলকপির রঙ বেগুনি হয়। বেগুনি ফুলকপি রান্নার পর বিবর্ণ হলেও কমলা ফুলকপি বিবর্ণ হয় না। কমলা রঙের ফুলকপির মতো বেগুনি ফুলকপিতেও সাদা ফুলকপির তুলনায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। বেগুনি রঙের ফুলকপি প্রদাহ উপশম, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে উপকারী। সাধারণ কপির তুলনায় রঙিন জাতের এ কপি বাজারে দাম ও চাহিদা বেশি। জৈব বালাই নাশক, কেঁচো সার, ফেরোফিন ফাঁদ ও জৈব স্প্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে এই রঙ্গিন কপি চাষ করা সম্ভব।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সলিমপুর ইউনিয়নের চরমিরকামারি মাথালপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে শফিকুল ইসলাম নতুন জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন।

কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, রঙিন ফুল কপির কথা আমি লোক মুখে শুনে ছিলাম। এরপর সামান্য জমিতে চাষ করার উদ্যোগ নেই। কিন্তু রঙিন ফুল কপির বীজ দুষ্প্রাপ্য ও অনেক মূল্য হওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগীতা চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে কোন প্রকার সাহায্য পাইনি। রঙীন ফুল কপির চাষের স্বপ্ন যখন শেষ, ঠিক তখনই বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের দাশুড়িয়া শাখা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন। তাদের সহযোগীতাতেই প্রথম বারের মত ১০ কাঠা জমিতে বেগুনী ও হলুদ জাতের রঙীন জাতের ফুল কপির চাষ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। চাহিদার তুলনায় যোগান কম হওয়ায় দামও ভালো পেয়েছি। খেতে অনেক সু-স্বাদু হওয়ায়, অনেকেই জমি থেকেই উচ্চ মূল্যে সংগ্রহ করছেন। কেউবা শখের বসে কিনছেন। বেশ ভালো আয় করেছি এই রঙীন ফুল কপিতে। তবে, রঙিন ফুল কপির বীজের দাম অনেক বেশী এবং দুষ্প্রাপ্য। আমাদের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা যদি কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখেন তাহলে নতুন নতুন স্বাস্থ্যসম্মত ফসল ফলানো সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, আমাদের মাধ্যমে কোন কৃষককে রঙিন কপি চাষে প্রযুক্তিগত সহযোগীতা ছাড়া অন্য কোন সহযোগীতা করা হয়নি। তবে,আমরা জানতে পেরেছি উপজেলায় বে-সরকারী সংস্থা জাগরণী ফাউন্ডেশন কিছু কৃষককে সহযোগীতা করেছে।

গবেষণায় বলছে, রঙিন সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থ করে। ফলে রঙিন ফসলের রয়েছে বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও মূল্য দ্বিগুণ।

(এসকেকে/এএস/১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)