তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : রফতানি আয় বৃদ্ধি। বস্ত্র খাতকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আদলে উপযোগী করে তোলা। দেশে বিদেশে বস্ত্র খাতের বিভিন্ন সাবসেক্টরে এক্সিকিউটিভ পর্যায়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সরবরাহ। আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। গোপালগঞ্জ ও দেশের অন্যান্য জেলার ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থীর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংএ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি। এছাড়া ব্যাপক আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থার লক্ষ্যে গোপালগঞ্জে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়ায় ৮ একর জমির জমির উপর ১শ’ ৪৯ কোটি টাকা ব্যায়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত কলেজটি নির্মাণ করা হয়। 

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজর কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছর প্রথম ব্যাচে ১১৪ জন দ্বিতীয় ব্যাচে ১২০ জন ও তৃতীয় ব্যাচে ১২৩ জনসহ মোট ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৩৫৭ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

কলেজ সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক পদে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩৮ টি। কিন্তু সেখানে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ৮ জন। এর মধ্যে ৩ জন বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তারা অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রহর গুনছেন। অফিস সহায়ক ও অফিস সহকারী অনুমোদিত পদ ৩৬ টি থাকলেও রয়েছে ৮ জন। আউটসোর্সিংয়ের লোকবল রয়েছে ১১ জন। থাকার কথা ১৪ জন। জনবল সংকট কলেজটির লক্ষ্য অর্জনের অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। অতিথি শিক্ষক দিয়ে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, সরকার বস্ত্র খাতে রফতানী আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ করেছে। কলেজের স্থাপনা গুলো আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের আদলে নির্মিত। রয়েছে বিশ্বের অধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত ব্যবহারিক ক্লাসের ব্যবস্থা। মসজিদ, খেলার মাঠ, শহীদ সহ কলেজ ক্যাম্পাসটি খুবই মনোরম। এ কলেজ প্রতিষ্ঠা সরকারের একটি সুদূর প্রসারী ও যুগান্তাকারী সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমাদের কলেজে শিক্ষক সহ জনবল সংকট প্রকট। এ কারণে আমাদের নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই যে লক্ষ্য নিয়ে সরকার এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে, সেটি ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। আমরা শিক্ষক ও জনবল সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশরিন সুলতানা বলেন, অতিথি শিক্ষক দিয়ে আমাদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তারা দ্রুত ক্লাস সম্পন্ন করে চলে যান। তাদের পরে ক্যাম্পাসে পাওয়া যায় না। এতে এক ধরণের শুন্যতা তৈরী হয়। কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকলে এ সমস্যা থাকে না। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের কারিগর হব। সেই ভাবেই পড়াশোনা করে নিজেদের প্রস্তুত করছি। কলেজে ক্যান্টিন নেই। চলাচলের জন্য ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফুটপাতের ব্যবস্থা করা হয়নি। এখানে নিরাপদ পানির সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যাগুলো সমাধান হলে দেশের সমৃদ্ধিতে এ কলেজটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

৩য় ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ রায়হানের অভিভাবক রিজভী হাসান রুবেল বলেন, ছোট ভাইকে আমরা জেনারেল লাইনে পড়াতে পারতাম। ওই লাইনে না দিয়ে, তাকে টেকনিক্যাল লাইনে দিয়েছে। যাতে সে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক হতে পারে। কিন্তু কলেজটিতে শিক্ষক ও জনবল সংকট প্রকট। এ কারণে কলেজে শিক্ষার্থীদের নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ সংকট কাটাতে পারলে কলেজটি অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নয়ন চন্দ্র ঘোষ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অতি আদরের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার নামে এই কলেজে। তাই শিক্ষক ও জনবল সংকটেও মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করে যাচ্ছি। এতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় জনবল দেওয়ার জন্য আমি একাধিকবার বস্ত্র অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। তারা এ সংকট নিরসনের আশ্বাস দিয়েছে।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪)