নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা : ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করার এই পরিস্থিতির জন্য তিনি তার লিখিত পদত্যাগপত্রে দায়ী করেছেন ছাত্রলীগ নামধারী মেডিসিন ক্লাবের কতিপয় বর্তমান ও সাবেক সদস্যকে। তার ভাষায় রাজনৈতিক স্বার্থ ও আধিপত্য বিস্তারের নিমিত্তে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের তারা আন্দোলনে নামিয়ে দেয়।

উল্লেখ্য, বুধবার সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের দাবিতে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অনিদিষ্টকালের জন্য অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে। তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাকে অপসারণ না হলে অধ্যক্ষকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে ছাত্র-ছাত্রীদের আমরণ অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্র-ছাত্রীরা।

কুমেকের অধ্যক্ষ ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও অপদস্ত করা, ছাত্রী হোস্টেলে ছাত্রীদের লাঞ্চনা, নির্যাতনের অভিযোগে তার পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলরত সকল ছাত্রছাত্রীরা। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে কলেজ ক্যাম্পাসে সকাল থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে গিয়ে বিষয়টি সহকর্মীদের নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের অনড় অবস্থানে থেকে যায়। এই পরিস্থিতিতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি জানান, অতিসম্প্রতি ছাত্রদেরকে সঠিক পথে চালিত করার স্বার্থে কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ছাত্রলীগ নামধারী মেডিসিন ক্লাবের কতিপয় বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্য তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ ও আধিপত্য বিস্তারের নিমিত্তে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অযৌক্তিক আন্দোলনে নামিয়ে দেয়। লেখাপড়ার টেবিল ছেড়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলনের জন্য আর একটি দিনও নষ্ট করুক-এটা তাঁর কাম্য নয়। ভবিষ্যতে একজন সুচিকিৎসক ও সুনাগরিক হওয়ার স্বার্থে আন্দোলন ছেড়ে লেখাপড়ায় বসুক সেই লক্ষ্যে তিনি অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। পদত্যাগ পত্রের শেষ পর্যায়ে তিনি কুচক্রিমহল থেকে এ কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী ও কর্তৃপক্ষকে সাবধান থাকার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন।

অপর দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও মেডিসিন ক্লাবের সভাপতি নাফিস রায়হান জানান, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের স্বতষ্ফুর্ত অংশ গ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ আন্দোলন কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতামুক্ত । অধ্যক্ষ আমাদের নির্যাতিত ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকে বিতর্কিত এবং ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই এই ধরণের ভিত্তিহীন অপপ্রচার করেছেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তিনি নিজেই পদত্যাগপত্রে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের শাসনের আশ্রয়ে আনার ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন। তিনি আমাদের অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ স্বীকারের মাধ্যমে নিজের দোষ বুঝতে পেরে পদত্যাগ করেছেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের বিষয়ে জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, কলেজের শিক্ষক, চিকিৎসক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার যে সব ‘উপকরণ’ এর নাম শুনেছি, তাতে বিব্রতবোধ করি।

(একেএইচ/এএস/নভেম্বর ১৩, ২০১৪)