রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : দেহ ব্যবসা ও ব্ল্যাক ব্ল্যাকমেইলের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর শহরের অনাথের মোড়ের বিউটি পার্লার ইয়াং লাইফের বিরুদ্ধে। দেহ ব্যবসায় সম্মত না হওয়ায় ফরিদপুর শহরের অনাথের মোড়ের বিতর্কিত বিউটি পার্লার ইয়াং লাইফ এসথেটিকস এন্ড লেজার সেন্টারের প্রশিক্ষণার্থী রুনা লায়লার উপর বর্বর হামলা চালান বিউটি পার্লারের মালিক শান্তা ইসলাম ও তার সহযোগী নাছির, তানিয়া ইসলাম, রুমন ও রাসেল।  এসময় তারা পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে রুনা লায়লাকে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এই ঘটনার ভুক্তভোগী আহত রুনা লায়লা (২৫)। 

১২ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া ওই বর্বর হামলায় রুনা লায়লা শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্তের পাশাপাশি মাথা কেটে যায়। উক্ত হামলার ঘটনায় একটি ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, কথিত ওই বিউটি পার্লারের সিসি টিভি ক্যামেরায় যা ধারণ হয়েছিলো। ভিডিও ফুটেজটি ইতিমধ্যে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কোতোয়ালি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ ফকির।

রুনা লায়লা ফরিদপুর সদরের চর মঙ্গলকোর্ট গ্রামের মো.সাহেব আলীর কন্যা। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী রুনা লায়লা'র পিতা মো. সাহেব আলী মোল্লা বাদী হয়ে মোট ৫ জনের নাম উল্লেখপুর্বক ও আরও অজ্ঞাত ২/৩ জনকে আসামী করে গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারী ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যাতে ১.শান্তা ইসলাম (৩৭) ২.নাছির খাঁ (৩৪) ৩.তানিয়া আক্তার (২২), ৪.রুমন (৪০) ৫.রাসেল শেখ (৪১) সহ আরও অজ্ঞাত ২/৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আহত রুনা ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন বাসায় অবস্থান করছেন।

প্রশিক্ষণার্থী রুনা লায়লা'র উপর ওই হামলা মামলার ১ নং আসামি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী শান্তা ইসলামসহ কোন আসামিকেই গ্রেফতার করতে পারেনি ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

মামলাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ ফকির উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামীর গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধান আসামী শান্তা ইসলামকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছেন তারা।

এই মুহুর্তে শান্তা ইসলাম পলাতক অবস্থায় রয়েছে বলেও জানান মাসুদ ফকির।

শান্তা ইসলাম না হয় পলাতক আছেন, কিন্তু তার সহযোগী নাছির, তানিয়া ইসলাম, রুমন ও রাসেলকে গ্রেফতারে কেনো অনাগ্রহ দেখাচ্ছে পুলিশ? ভুক্তভোগী রুনা'র এমন প্রশ্নের জবাব জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ ফকির বলেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শান্তা ইসলামকে তাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আসামি বলে মনে হয়েছে, তাই তিনি শান্তা ইসলামকেই গ্রেফতারের চেষ্টা করছেন।

ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানা পুলিশ দেহ ব্যবসায় সম্মত না হওয়ায় ফরিদপুর শহরের অনাথের মোড়ের বিতর্কিত বিউটি পার্লার ইয়াং লাইফ এসথেটিকস এন্ড লেজার সেন্টারের প্রশিক্ষণার্থী রুনা লায়লার উপর বর্বর হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করেছে। ভিডিও ফুটেজটিতে রুনা লায়লার গলায় চাকু ধরে নির্যাতনের চিত্র থাকলেও পিস্তল উঁচিয়ে মারপিট ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায়ের অংশটুকু নেই।

কোতোয়ালি থানা পুলিশ ভিডিও ফুটেজের ব্যাকআপ উদ্ধারে সক্ষম হবেন এবং বিতর্কিত বিউটি পার্লার ইয়াং লাইফ এসথেটিকস এন্ড লেজার সেন্টারের মালিক শান্তা ইসলাম ও তার ভয়ঙ্কর দুর্বৃত্ত সহযোগীদের আইনে সোপর্দ করে কঠোর বিচার নিশ্চিত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা ও মামলাটি'র বাদী মো. সাহেব আলী মোল্লা।

এদিকে, যশোর শহরের বেজ পাড়ার মোড়ের জলি টাওয়ারের তৃতীয় তলায় এবং বাংলা মোটর সিগনালের পশ্চিম পাশে খোদেজা খাতুন প্রাইমারী স্কুলের বিপরীতের বিউটি পার্লার ইয়াং লাইফ এসথেটিকস এন্ড লেজার সেন্টার দু'টির মালিকানা এই শান্তা ইসলাম বলে জানা গেছে।

দেহ ব্যবসায় সম্মত না হওয়ায় ফরিদপুর শহরের অনাথের মোড়ের বিতর্কিত বিউটি পার্লার ইয়াং লাইফ এসথেটিকস এন্ড লেজার সেন্টারের প্রশিক্ষণার্থী রুনা লায়লার উপর বর্বর হামলার মহানায়িকা ও বিউটি পার্লারের মালিক শান্তা ইসলাম এখন ফরিদপুর থেকে পালিয়ে যশোর বা ঢাকায় গা ঢাকা দিয়ে আছেন বলে ধারণা করছেন ভুক্তভোগী রুনা লায়লা।

এদিকে, বিউটি পার্লার ইয়াং লাইফ এসথেটিকস এন্ড লেজার সেন্টারে আসলে হয়টা কী? এসব তথ্য উন্মোচন করতে গিয়ে ব্লাক মেইলিং ও দেহ ব্যবসার মাধ্যমে কিভাবে খুব অল্প দিনে কোটিপতি বনে যান শান্তা ইসলাম তার ভয়ংকর কিছু তথ্য এসেছে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের হাতে। যা পরবর্তী নিউজে বিশদ বর্ণনায় প্রকাশিত হবে।

ফরিদপুর শহরের অনাথের মোড়ের 'সাঁঝের মায়া' অনুমোদিত একটি আবাসিক ভবন! সেই ভবনে কী করে চলে বিউটি পার্লার কাম ডিউটি পার্লারের আড়ালে অন্য কোন ব্যবসা? এমন প্রশ্ন উঠেছে ফরিদপুরের সুশীল সমাজ ও সচেতন মহলে।

এই বিষয়ে জানতে এই প্রতিবেদকের কথা হয় বিউটি পার্লার- ইয়াং লাইফ এসথেটিকস এন্ড লেজার সেন্টারের মালিক শান্তা ইসলামের সাথে। তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'রুনা লায়লাকে আমি বিশ্বাস করে চাকরি দিয়েছিলাম অসহায় ভেবে, কিন্তু সে বিশ্বাসের অমর্যাদা করে আমার স্বামীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়, আমার স্বামীকে ভাগিয়ে বিয়ে করে আমার স্বামীর নামে থাকা ফ্লাট নিয়ে যেতে চায়। আমি সবকিছু জানতে পেরে ফরিদপুর এসে আগে আমি আমার স্বামীর থেকে সবকিছু আমার নামে করে নেই। কারণ, এসব আমার টাকায় কেনা ছিলো। তারপর আমি ওই মেয়েটাকে বের করে দিতে কিঞ্চিৎ মিথ্যায় আশ্রয় নিয়ে ওর বাবাকে ফোন দিয়ে বলি, আপনার মেয়ে অবৈধ কাজ করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে, আপনি এসে আপনার মেয়েকে নিয়ে যান। তারা কেউ না আসলে ওদের সাথে একটু ঝামেলা হয়। আমি আমার ভাই-ব্রাদার ডাকি। পরে ওকে কে বা কারা মেরেছে আমি জানিনা। আমি ওকে মারিনি বরং ওর স্বামী আমার গায়ে হাত দিয়েছে।'

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রুনা লায়লা বলেন, 'শান্তা ইসলাম যা বলেছে তা মিথ্যা, ও আমাকে কিল-ঘুষি, চর-থাপ্পরসহ বাটাম দিয়ে পিটিয়েছে। শান্তা ইসলাম যে কি ধরণের খারাপ মানুষ তা আপনারা একটু খোঁজ খবর নিলেই ক্লিয়ার হয়ে যাবেন। আমি মাত্র ১৩/১৪ দিনে তার সম্পর্কে অনেক কিছুই বুঝেছি। ও কত বড় ভয়ংকর দেহ ব্যবসায়ী ও ব্লাক মেইলার তা আপনাদের ধারনাও বাইরে।' রুনা আরও বলেন, 'মাত্র দুই বছরের মধ্যে শান্তা ইসলাম এতো টাকার মালিক কেমনে হইলো, দামি ফ্লাট, বাড়ী, দামী গাড়ী, তিনটা বিউটি পার্লার কেমনে করলেন? অনুসন্ধান করলে বিউটি পার্লারের আড়ালে দেহ ব্যবসা ও ব্লাক মেইলের ভয়ংকর কাহিনী বেড়িয়ে আসবে।' রুনা লায়লা আরও জানান, 'আমাকে দেহ ব্যবসায় রাজি না করাতে পেরে মারধর করে সাদা স্টাম্পে সই করিয়ে রাখে। মিথ্যা বলে আমার বাবাকে ফোন দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে।'

শান্তা ইসলামের স্বামীর সাথে তার পরকীয়ার সম্পর্ক ও শান্তা'র অভিযোগের বিষয়ে রুনা লায়লা উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, আমি মাত্র ১৩/১৪ দিন কাজ করেছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি কাজ শিখেছি। শান্তার স্বামী আমার কাছে ফোনে, শান্তার কুকৃর্তির কথা ও তার কষ্টের কথা আমাকে বলতো।' অস্বীকার করবো না যে, সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলো। কিন্তু আমি পরে বুঝতে পেরেছি এটাও স্বামী-স্ত্রী'র একটি পরিকল্পিত ফাঁদ ছিলো। কারণ, ওরা এমনই।'

রুনা লায়লা আরও জানান, 'শান্তা'রা জানতো আমার স্বামীর সাথে খারাপ সময় যাচ্ছে, আমাকে কোনভাবে ফাঁসাতে পারলে, হয়তো ওরা আমাকে ব্লাক মেইল ও দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতে পারতো, কারণ আমি শুরু থেকেই শান্তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছিলাম।'

এদিকে, সূত্র বলছে বিউটি পার্লারের আড়ালে দেহ ব্যবসার খদ্দের ও ব্যাক ইমেইলের স্বীকার হওয়াদের তালিকায় রয়েছে ফরিদপুর, যশোর ও ঢাকার কিছু ব্যক্তির নাম! যার মধ্যে কিছু নামকরা ব্যক্তিবর্গও রয়েছেন বলেও নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।

(আরআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪)