লোহাগড়া প্রতিনিধি : "মধুমতি নদী আমার ভিটামাটি সব খ্যায়ে ফেলিছে। সব কিছু হারাইয়ে কুল কিনারা না পায়ে আমার ছ্যায়াল ডারে পাঠাই ছিলাম জাহাজে চাকরি করার জন্যি। ডাকাতেরা আমার বুকের ধনরে শ্যাস করে  ফ্যাললো এহন আমি কি নিয়ে বাঁচব আমি আমার ছ্যাওয়ালের লাশডা ও পালাম না”। এভাবেই লোহাগড়া উপজেলার দোয়া মল্লিকপুর গ্রামের অন্ধ পিতা আজিজুর রহমান (৭৫) জানাচ্ছিলেন তার ছেলে শাফিনুর রহমান শাকিলের নিখোঁজের কথা । শাকিলের স্ত্রী বিথীকা (২৮)স্বামীর নিখোঁজের খবরে একবারে পাথর হয়ে অপেক্ষায় আছেন স্বামীর লাশের আশায়।বাবাকে শেষ বারের মতো দেখতে চায় অবুঝ দুটি কন্যা শিশু এশা (১০) আর ঐশি (৭)।

একই অবস্থা উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের আস্তাইল গ্রামে । বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) গভীর রাতে আরেক হতভাগ্য এমভি কর্ণফুলী-৫ জাহাজের মাষ্টার এনামুল হোসেন মুক্তির লাশ এসে পৌছে তার নিজ বাড়িতে । সেখানে তার স্ত্রী নার্গিস বেগম (৩৫) ও তার ৩ সন্তান আকাশ(১৪), সম্রাট (১২), নাদীম (৮) এবং পরিবারের লোকদের সান্তনা দেবার ভাষা খুঁজে পায়নি প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনেরা । এনামুলের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, গত বুধবার ১২ নভেম্বর ভোলার মনপুরা উপজেলার দক্ষিন সাকোতিয়া এলাকার মেঘনার চর থেকে এনামুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে লাশ বাড়িতে পৌছানোর পর ১৪ নভেম্বর শুক্রবার সকালে এনামুলের নিজ গ্রামে পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে হাহাকার করছেন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার হতভাগ্য দুই নাবিকের পরিবারের লোকেরা । বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন পরিবারের লোকেরা । শুধু পরিবার ই নয়, এ ঘটনায় শোকাহত গোটা গ্রামের মানুষ । দুটি গ্রামে চলছে শোকের মাতম । এদিকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার দোয়া মল্লিকপুর গ্রামের নিখোঁজ সুকানি শাফিনুর রহমান শাকিলের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, চট্রগ্রাম বন্দর থেকে সিমেন্ট বোঝাই লাইটার জাহাজ এমভি কর্ণফুলী-৫ যশোরের নওয়াপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসার সময় লক্ষ্মীপুর জেলার বাতিরখোল এলাকায় পৌছালে ৭ নভেম্বর গভীর রাতে একদল সশস্ত্র দূবৃর্ত্ত জাহাজে হামলা চালায় । হামলা করে মালামাল লুটের পর জাহাজের ১১ নাবিকের মধ্যে ৭ জন নিখোঁজ হন । নিখোঁজ ৭ জনের মধ্যে জাহাজের মাষ্টার এনামুল হোসেন মুক্তি (৪৫) র বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আস্তাইল গ্রামে, অন্যজন জাহাজের সুকানি শাফিনুর রহমান শাকিল (৩৫) এর বাড়ি একই উপজেলার দোয়া মল্লিকপুর গ্রামে । হত্যার পর প্রথমে দুজন নিখোঁজ থাকলেও বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এনামুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পরিবারের দাবী সরকারী বা জাহাজ কর্তৃপক্ষের যথাযথ ক্ষতিপূরন পেলে হতভাগ্য পরিবার দুটির অন্ধকার কিছুটা হলেও ঘুচতে পারবে।

(আরএম/পি/নভেম্বর ১৪, ২০১৪)