রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী লামিশা ইসলামকে তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে দাফন করা হয়েছে।

শুক্রবার (১ মার্চ) বাদ জুমা ফরিদপুরের চকবাজার জামে মসজিদে জানাজা শেষে তাকে জেলা শহরের আলীপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

নিহত লামিশা অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম শামীমের মেয়ে। মৃত্যুর আগে বাবার কাছে সাহায্য চেয়ে ফোন করেছিলো লামিশা। কিন্তু তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে চকবাজার মসজিদে অনুষ্ঠিত জানাজায় ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার, পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ ফরিদপুরের বিভিন্ন অফিসের সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ ও এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মুসল্লিরা অংশ নেন।

এছাড়া ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ জানাজায় অংশ নিতে ছুটে আসেন।

ফরিদপুর শহরের আলীপুর গোরস্থানে লামিশাকে দাফন শেষে পরে অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ এবং ইন্সপেক্টর সুনীল কুমার কর্মকারের নেতৃত্বে পিবিআই এর পক্ষ থেকে তার কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এদিকে, শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে পুলিশের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে লামিসার মরদেহ ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলীর বাড়িতে আনা হয়। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।


নিহত লামিশার চাচা রফিকুল ইসলাম সুমন জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে লামিশা বেইলি রোডের সাততলা ভবনের ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকানে যায় বান্ধবীদের সাথে ডিনার করতে। এরপর সে ফোন করে তার বাবাকে আগুন লাগার কথা জানায় এবং তাকে বাঁচাতে সাহায্য কামনা করে।

রফিকুল আরও বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়। তবে তারপর থেকে যতবারই আমরা তার মোবাইলে ফোন করেছি, সেটি বন্ধ পেয়েছি। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের রেসক্যু টিম তার মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত লামিশা বুয়েটের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ভিকারুন্নেসা থেকে এসএসসি ও হলিক্রস থেকে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। দুই বোনের মধ্যে লামিসা বড়। ছোট বোন রাইসা এ বছর ভিকারুন্নেসা কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

অসুস্থতাজনিত কারণে ২০১৮ সালে মারা গেছেন লামিশার মা আফরিনা মাহমুদ মিতু। এরপর ছোট বোন আর বাবাকে আগলে রাখতেন লামিশা।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের সাততলা একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৬ জন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২২ জন। তারা কেহই আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামান্ত লাল সেন।

(আরআর/এএস/মার্চ ০১, ২০২৪)