রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দশপদী সনেট স্মরণে অনুকরণীয় ‘বিশ্ব শান্তিতে জাতিসংঘ’ কবিতার বই লিখে সাড়া ফেলেছেন উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পোড়াকাটলা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুজিত হালদার।

উপকূলের সুন্দরবন সংলগ্ন একটি হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সদ্য একাডেমিক শিক্ষা শেষ করা সুজিত সবসময় নতুনত্বের সন্ধানে লেখাপড়ার পাশাপাশি কখনো কবিতা, চিত্র অংকনসহ বিভিন্ন লেখালেখিতে পারদর্শী।

হতদরিদ্র পিতা হরিচরণ হালদার পেশায় একজন দিনমজুর। একটি টিনের ছাউনি ঘরেই তাদের বসবাস। কয়েক শতক ভিটা মাটিতেই লবণ যুদ্ধে ফসলের কোনো আঁচ নেই। অভাবের সংসারে মা শিলা রানী হালদার কখনো চিংড়ি ঘেরে, কখনো কৃষি জমিতে শ্রম দিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার চেষ্টা নিরন্তর মাত্র। কিন্তু শিক্ষার সুযোগ থেকে পরিবার কোন সময় তাকে বঞ্চিত করেনি।

শিক্ষাজীবনে সুজিত পোড়াকাটলা রেজিস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরে পাশের গ্রামে মামার বাড়িতে থেকে দীপায়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর মুন্সিগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পরবর্তীতে খুলনার বয়রার খান জাহান আলি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার কোর্স শেষ করেন। স্বপ্ন ছিল বি,এস,সি করার কিন্তু টাকাপয়সা যোগাড় না হাওয়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি। পরে খান জহান আলী মহাবিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করেন মেধাবী সুজিত হালদার।

উপকূলের বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানার কারণে একটু দাঁড়ানোর মত স্বপ্ন টুকু আইলার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন প্রকার টিকে থাকা মাত্র। কিন্তু তার প্রতিভা বিকাশিত করার সুযোগ হচ্ছে না।

কান্নাজড়িত কন্ঠে সুজিত জানান, অর্থ এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমার প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারছি না। তাই চাকরি পরিক্ষাসহ টিকে থাকতে না পেরে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ আমাদের শখ আহ্লাদ বলে কিছু নেই এই বলেই মনকে সান্ত্বনা দেই।

এখন বাড়ির পাশে অবস্থিত সিলেট হ্যাচারিতে সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কর্মস্থল বেছে নিয়েছেন। তবুও থেমে নেই সুজিত। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও চাকরির পড়াসহ গল্প,কবিতা লেখে সে। তার লেখা ‘বিশ্ব শান্তিতে জাতিসংঘ’ কবিতার বইয়ে স্মৃতিতে বাংলাদেশ, বঙ্গ জনক, মৃত্তিকাসহ প্রায় অসংখ্য কবিতা লিখেছেন পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় ইউনাইটেড নেশন নামে ও একটি বই লিখেছে সে। প্রকাশিত হওয়ার পরে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন গুণীজনের কাছে। লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের মনও কেড়েছেন।

সুজিতের শিক্ষক পোড়াকাটলা দীপায়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনঙ্গ কুমার মন্ডল বলেন, সুজিত অনেক মেধাবী ছাত্র। স্কুল জীবনে সে শান্ত প্রকৃতির ছাত্র ছিল। তার লেখালেখিতে অনেক প্রতিভা আছে আমরা জানি। কিন্তু দরিদ্র হওয়ায় তার সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটেছে না। নিজে পরিশ্রম করে আজও সে তার পরিবারের ভরণপোষণ সহ তার লেখাপড়ার জন্য যেটা খুবই প্রশংসনীয়। আমি তার সাফল্য কামনা করি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য স্বপন বিশ্বাস বলেন, সুজিত হালদার এলাকার একটি শান্তশিষ্ট প্রকৃতির ছেলে। সে অনেক মেধাবী। সে কয়েকটি বই লিখেছে জানি তবে দরিদ্রতার কারণে সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। আমরাও চাই তার প্রতিভার বিকাশ ঘটুক।

(আরকে/এসপি/মার্চ ১৮, ২০২৪)