আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজায় আকাশ ও স্থলপথে হামলা করে চলেছে ইসরায়েল। এতে করে গাজা ভূখণ্ডটিতে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। তীব্র খাদ্যসংকটের কারণে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষের অবস্থা ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি দুর্ভিক্ষ-অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন ৩ লাখ ফিলিস্তিনি।

জাতিসংঘের বিভিন্ন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এমনটাই জানিয়েছে বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড-সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)। এই অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিরতি ও ত্রাণসহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষ ভয়াবহ মাত্রায় খাদ্যসংকটে ভুগছে। সাধারণত, কোনো অঞ্চলে ২০ শতাংশ মানুষ এই মাত্রায় খাদ্যসংকটে ভুগলে তাকে দুর্ভিক্ষ বলা হয়। আর এখানে সেই সর্বনিম্ন বিন্দুর ৩ গুণেরও বেশি মানুষ খাদ্য সংকটে আছে।

আইপিসি জানিয়েছে, তাদের কাছে দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষ মারা যাওয়ার তথ্য নেই। তবে সংস্থাটির অনুমান, খুব শিগগির দুর্ভিক্ষের কারণে যে হারে মানুষ মরতে শুরু করে, গাজায়ও সেই পরিস্থিতি শুরু হয়ে যাবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত প্রতি ১০ হাজার জনে ২ জন মারা যায় ক্ষুধা, অপুষ্টি আর এসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরই মধ্যে ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে অঞ্চলটিতে ২৭ শিশু ও ৩ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি মারা গেছে।

আইপিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নে গাজার জনগণের জন্য মানবিক ও বাণিজ্যিক সাহায্যের প্রবেশাধিকার উল্লেখযোগ্য ও অবিলম্বে বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য অবিলম্বে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।’ সংস্থাটি বলেছে, সব মিলিয়ে গাজার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ১১ লাখ মানুষ খাদ্যের ‘বিপর্যয়কর’ ঘাটতির মুখে এবং প্রায় ৩ লাখ গাজাবাসী দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরায়েলের সেই নির্বিচার হামলায় অঞ্চলটিতে ৩১ হাজার ৬০০ জনের বেশি নিহত এবং ৭২ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। দেশটি কেবল হামলা করেই ক্ষান্ত থাকেনি। গাজায় সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল, যার কারণে অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল গাজার দুর্ভিক্ষ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, গাজায় আমরা আর দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নেই। সেখানে আমরা দুর্ভিক্ষের মধ্যে আছি...অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ইসরায়েল দুর্ভিক্ষকে উসকে দিচ্ছে।

(ওএস/এএস/মার্চ ১৯, ২০২৪)