ইউএনওর অশ্লীল ভিডিওর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, সেই আনসার সদস্যের জামিন
নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সদ্য বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্ত্রীর করা চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হওয়া দেহরক্ষী আনসার সদস্য আকাশ বিশ্বাসকে (২৭) জামিন দিয়েছেন আদালত।
আনসার সদস্যের আইনজীবী অ্যাডভোকেট উত্তম কুমার ঘোষ গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার (২০ মার্চ) দুপুরে নড়াইল সিনিয়র জুডিশিয়াল-২ আদালতের বিচারক হেলাল উদ্দিন এ জামিন মঞ্জুর করেন।
আনসার সদস্য আকাশ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর গ্রামের মৃত নিহার বিশ্বাসের ছেলে। আকাশ গত ২ বছর লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে লোহাগড়ার ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাসের অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে স্ত্রী বিপাশা বিশ্বাসের কাছ থেকে কয়েক দফায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন অজ্ঞাত চাঁদাবাজরা। ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের পরও চলতি মাসের ৫ তারিখে আবারও চাঁদা দাবি করায় এ মাসের ১২ তারিখ লোহাগড়া থানায় ইউএনওর স্ত্রী বিপাশা বিশ্বাস চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে আনসার সদস্য আকাশ বিশ্বাসসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
জানা যায়, গত মাসের ১৭ তারিখে মুঠোফোনে ইউএনওর স্ত্রী বিপাশাকে হুমকিদাতারা তাদের দেয়া ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠাতে বলেন। চাঁদাবাজদের নির্দেশনায় টাকা পাঠানোর দিনে ইউএনওর গাড়িতে থাকা তার দেহরক্ষী আনসার সদস্য আকাশ অবস্থান করছিলেন। এক পর্যায়ে ইউএনওর স্ত্রী টাকা পাঠানোর জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের বুথে গেলে দেহরক্ষী দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য আকাশ বলেন, 'ম্যাডাম ব্র্যাক ব্যাংকের বুথ থেকে ডাচ বাংলার একাউন্টে টাকা পাঠানো যায় না। ডাচ বাংলার বুথ থেকে ডাচ বাংলায় টাকা পাঠাতে হয়।'
এ কথার সূত্র ধরে দেহরক্ষী আকাশকে সন্দেহ করে এজাহারে তার নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ইউএনওর স্ত্রী।
এই মামলার সূত্র ধরে পরে গত সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে ছুটি শেষে কাজে যোগদানের উদ্দেশে আকাশ লক্ষীপাশা বাসস্ট্যান্ডে নামলে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর মঙ্গলবার (১২ মার্চ) মামলা রজুর মাধ্যমে পরদিন বুধবার (১৩ মার্চ) গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায় লোহাগড়া থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ভুক্তভোগী ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাসের স্ত্রী বিপাশা বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য নিতে পারেনি গণমাধ্যম কর্মীরা। তবে ইউএনও দাবি করেছিলেন, তার স্ত্রীর করা চাঁদাবাজি মামলার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তাকে মামলার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে এ সংক্রান্ত খবর একাধিক পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর গোপন ভিডিওর তথ্যে নানা আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে নড়াইলের বিভিন্ন মহলে।
জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরিন জাহানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে সোমবার ( ১৮ মার্চ) কোন প্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই রাতের আঁধারে পরবর্তী কর্মস্থল বরগুনা উদ্দেশে লোহাগড়া ত্যাগ করেন অনিমেষ বিশ্বাস ও তার পরিবার।
(আরএম/এএস/মার্চ ২০, ২০২৪)