আবু নাসের হুসাইন, সালথা : সকাল থেকে মধ্যে রাত পর্যন্ত ধারালো দা দিয়ে বাঁশ কেটে তৈরি করা হয় কৃষকের পেঁয়াজ ঘরে রাখার বানা। এই বানা তৈরি করেই চালাতে হয় তাদের সংসার। একটি পরিবারের স্বামী- স্ত্রী ও সন্তানরা মিলে তৈরি করেন বানা। তারপর ব্যাপারীরা বাড়িতে এসে পাইকারী দামে কিনে নিয়ে যান বানা।  

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের মেম্বার গট্টি ও দরগাহ গট্টি গ্রামে প্রায় ২ শতাধিক পরিবার পেঁয়াজের বানা তৈরি করে থাকেন। তারা এই কুঠির শিল্পটি ধরে রেখেছেন। এবছর বানার দাম কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন কারিগররা।

দরগাহ গট্টির মালো পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, স্বামী - স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে সবাই বানা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ধারালো দা হাতে টাকুর-টুকুর করে কেউ বাঁশ চেঁছে চটি বানাচ্ছে, কেউ চটি থেকে পাতলা পাতলা করছে। আর মহিলারা সেগুলো দিয়ে বানা তৈরি করছে। মুখে নেই কোন হাসি। অভিরাম কাজ করে চলছে। কারো দিকে চোখ ফেরানোরও সময় নেই তাদের। পরিবারের সবাই ব্যস্ত বানা তৈরিতে।

দরগাহ গট্টি গ্রামের বানা তৈরির কারিগর নির্মল কুমার মালো বলেন, একটা বাঁশের দাম ৪ শ টাকা। একটা বানা তৈরির মুজুরী ২শ টাকা। একটা বাঁশ দিয়ে ৫ হাতের একটা বানা তৈরি করা যায়। পেঁয়াজ দাম কম হওয়ায় একটা বানা পাইকারী বিক্রি করছি ৪থেকে ৫শ টাকার মতো। তবে পরিবারের সবাই মিলে বানা তৈরি করি বলেই বানাপ্রতি ১/২শ টাকা করে থাকে। আর মানুষ দিয়ে তৈরি করলে লস হতো।

তিনি আরো বলেন, অল্প আয়ের মানুষ আমরা। আমাদের মুল পেশা পেঁয়াজের বানা তৈরির কাজ। এছাড়াও আমরা সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা পাই না। বানা তৈরি করেই কোন মতে চলে আমাদের সংসার।

সঞ্জয় মালো নামে আরেক কারিগর বলেন, আমাদের বানা তৈরি করা ছাড়া তেমন কোন কাজ নেই। তবে আমরা যারা মালো সম্প্রদায় আছি তারা বর্ষার সময় হলে জাল-দরি টেনে কোনমতে সংসার চালাই।

সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আনিছুর রহমান বালী বলেন, এটি একটি কুটির শিল্প। সরকার বিভিন্ন সময়ে কুটির শিল্পের জন্য প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন ও প্রণোদনার আয়োজন করে থাকে। এক্ষেত্রে এই কুটির শিল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে যেরকম সহায়তা যৌক্তিক হতে পারে সেবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

(এএন/এসপি/মার্চ ২৪, ২০২৪)