তুষার বাবু, নেত্রকোণা : দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে নেত্রকোণায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দোলযাত্রা উৎসব উদযাপিত হয়েছে। সদর উপজেলার হাতকুন্ডলী গ্রামে কামাখ্যা মন্দির প্রাঙ্গণে মেলায় নেমেছে মানুষের ঢল। দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে রাধা ও অন্য গোপীদের সঙ্গে রঙ খেলেছিলেন। এই দিনে রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহে আবির দিয়ে উৎসবের শুরু হয়। ভক্তরাও দিনটিতে পরস্পর আবির দিয়ে রঙ খেলেন।

তবে কিছুটা ব্যাতিক্রম দোলে কামাখ্যা মাতা মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান। এইদিন সকাল ৯ টার দিকে সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের হাতকুন্ডলী গ্রামের স্থানীয়ভাবে পরিচিত 'বড়াইল কামাখ্যাবাড়ী' মন্দিরে ধর্মীয় বিধিমতে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে দোল উৎসব শুরু হয়। মূলত হাজং জনগোষ্ঠী আরাধ্য দেবী 'কামাখ্যা মাতা'র অনুসারীরা এই মন্দিরের পূজারী হলেও সকল সনাতনী সহ সাধারণ দর্শক ও ভ্রমণপিপাসুরা ভীড় করেন এই মন্দিরে। মূলত ভারত বাদে বাংলাদেশের মাত্র তিনটি মন্দিরে কামাখ্যা মাতার পূজো করা হয় বলে জানান মন্দির কমিটির সভাপতি নির্মল চন্দ্র সাহা। এর মাঝে একটি ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও, অপরটি একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার মুজাখালি গ্রামে এবং অবশিষ্টটি ২০০ বছরেরও অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী নেত্রকোণার এই 'বড়াইল কামাখ্যা বাড়ি'র পুজো।

দোল উপলক্ষে এই দিন সকালে ভক্ত-অনুসারীরা উপোস থেকে মন্দিরে প্রবেশ করেন। হাজং জাতির একজন দেবর্ষি পুরোহিত হিসেবে পুজো পাঠের পর ভক্তরা উলুধ্বনি দিয়ে কামাখ্যা মাতার শিলা বিগ্রহ, বলির পীঠ, স্বয়ং পুরোহিত দেবর্ষি ও আপনজনদের আবির মেখে তারপর প্রসাদ বা আহার গ্রহণ করেন।

প্রতিবছর এইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এইরুপে মন্দির সহ আশপাশের পুরো এলাকাটি দই-চিড়া-কলা সহ নানান রকম খাবার, ফল-ফলাদি, মাটির খেলনা, আবির বিক্রেতাদের নিয়ে একদিনের একটা আনন্দমুখর অস্থায়ী মেলায় পরিণত হয়।

মন্দিরের তৃতীয় প্রজন্মের পুরোহিত বিমল দেবর্ষী বলেন, ‘এইদিনে কামাখ্যা মাতা ভক্তদের সাথে মিলিত হন। আমরা ভক্তরা তাঁকে আবির মাখিয়ে দেই, তিনি আমাদের আবির মাখিয়ে দেন। এই দিন আমাদের আনন্দের দিন।'

মন্দির কমিটির সেক্রেটারি ক্ষিতিশ দাস জানান, "১৯৬৮ সালে কংস নদের ভাঙনের ফলে প্রাচীন কামাখ্যা মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে ১৯৬৯ সালেই বর্তমান স্থানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলা হচ্ছে। তবে গ্রামীণ পরিবেশ, ভাঙাচোরা রাস্তা ও কোনরকম সরকারি আর্থিক সহায়তা কিংবা প্রণোদনার অভাবে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা ও পুজো তার প্রাপ্য জৌলুস ধারণ করতে পারছে না।" এ ব্যাপারে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি প্রার্থনা করেন।

(টিবি/এসপি/মার্চ ২৫, ২০২৪)