রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বধ্যভূমিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরায় পালিত হয়েছে গণহত্যা দিবস। 

আজ সোমবার সাতক্ষীরা জেলা বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়ার দীনেশ কর্মকারের জমিতে ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় জেলা বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সুভাষ সরকারের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য দেন, সংগঠণের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যাণার্জি, জেলা জাসদের সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, জেলা আওয়ামী লেিগর আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. ওসমান গণি, জেলা বাসদের সমন্বায়ক কলেজ শিক্ষক নিত্যানন্দ সরকার, জাসদ নেতা প্রভাষক ইদ্রিস আলী, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ, জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু, শিক্ষক মমিনুর রহমান, প্রথম আলো বন্ধ সভার সভাপতি কর্ণ বিশ্বাস প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছরেও ১৯৭১ সালে সংগঠিত হওয়া বধ্যভূমিগুলোর অধিকাংশই সংরক্ষণ করা হয়নি। নির্মাণ করা হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ। অথচ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার টানা চার বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধীন রয়েছে। সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়ায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃষ্টির কারণে ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল আশ্রয় নেওয়া বাগেরহাট, খুলনা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় চারশত শরণার্থীকে পরদিন দীনেশ কর্মকারের বাড়িতে ব্যায়নট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে সেখানে লাশ পুতে রাখা হয়।

এ ছাড়া সদর উপজেলার ঝাউডাঙা, বাঁকাল, মাহমুদপুর, শহরের পালপাড়া, কলারোয়ার মুরারীকাটি পালপাড়াসহ উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি বধ্যভূমি আজো চিহ্নিত করে সংরক্ষণ ও তাতে স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা হয়নি। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ১০ বছর সময় পার করলেও সাতক্ষীরা সদরের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেননি। যদিও দীনেশ কর্মকারের বাড়ির বধ্যভূমির একাংশে জনৈক মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান বাড়ি বানিয়েছেন। ওই বধ্যভূমির পাশ দিয়ে মুসলিম লীগ কর্মী রকিবের নামে রাস্তা নামকরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক দীনেশ কর্মকারের বাড়ির পাশে সহ পাঁচটি স্থানে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির উদ্যোগ নিলেও তা রয়ে গেছে কাগজে কলমে।

এরপর বধ্যভূমিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে প্রতীকি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপরপরই জেলা প্রশাসকের আয়োজনে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খানসহ মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ প্রতীকি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সকাল সোয়া ১০ টায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক। সেখানে জেলার সকল বধ্যভূমি একে একে চিহ্নিত করে সংরক্ষণ ও তাতে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।

(আরকে/এসপি/মার্চ ২৫, ২০২৪)