শেখ ইমন, শৈলকুপা : যেন রোগী ভাগানোর ‘উৎসব’! ফন্দি এঁটে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগী পাঠানো, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের জন্য ফার্মেসী সবই ‘নির্ধারিত’। শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পা ফেললে রোগীকে দেখতে হয় এমন দালাল ‘ফাঁদ’। এই ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে অসংখ্য দালাল। শুধু পুরুষ নয়, রোগীর ‘মন ভোলাতে’ আছে নারী দালালও। 

শৈলকুপার প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় রোগী এবং তাদের স্বজনকে নানা প্রতিশ্রুতির চোরাবালিতে ফেলে এ চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। অনেক সময় দালালদের খামখেয়ালিপনায় মরণাপন্ন হয়ে পড়ছে রোগী। মূল ফটক থেকে ভেতরের ওয়ার্ড পর্যন্ত পুরো হাসপাতাল জুড়ে দালালদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য। দিনের পর দিন হাসপাতালজুড়ে এমন দালালকান্ড চললেও যেন দেখার কেউ নেই। অভিযোগ আছে, এদের ধরতে কার্যকর পদক্ষেপও নিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ খবর নিয়ে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে প্রায় ৩০ দালালের সক্রিয় উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৫। হাসপাতালের চারপাশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসি এসব দালালকে পালছে। রোগী ভাগানোর ওপর দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে কমিশন ঢোকে দালালের পকেটে। দালালদের ‘প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব’ তৈরি করতে দেওয়া হয় লোভনীয় টাকার প্রস্তাব। যেসব বিভাগে রোগীর আধিক্য, অস্ত্রোপচারের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয়– রোগী ভাগাতে সেখানেই থাকে দালালদের চতুর চোখ।

এ উপজেলায় বসবাস প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের। যাদের জন্য রয়েছে ১টি সরকারী হাসপাতাল। কিন্তু দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে রোগীদের প্রতিনিয়িত পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি শৈলকুপার দরিদ্র ও অসহায় রোগীর একমাত্র ভরসার চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে কয়েক শত রোগী। এত রোগীতে গমগম করায় দালালদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে হাসপাতালটি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সক্রিয় থাকে দালালরা। রোগী ও তাদের স্বজনকে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম– এমন দালালদের মাঠে দায়িত্ব দেয় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান। পুরুষ দালালদের পাশাপাশি নারী দালালদের হাতে নিয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের প্রধান ফটক ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করে দালালরা।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনেরা বলেন, দালালেরা প্রথমে নিজেদের হাসপাতালের কর্মী পরিচয় দেন। পরে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা বলে উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। হাসপাতালের যন্ত্রাদি অচল ও নিম্নমানের বলে রোগীদের ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিকে নিয়ে যায়।

সচেতন নাগরিক রেজাউল ইসলাম রাজু বলেন, ‘দরিদ্র-অসহায় রোগীদের একমাত্র ভরসার হাসপাতালে যদি দালালদের এমন উৎপাত হয় তবে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? এটি খুবই ভয়াবহ ঘটনা। দ্রুতই এর সমাধান করা প্রয়োজন।’

দালালদের এমন উৎপাতের বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দালালচক্র ধরতে দুইবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগীতায় অভিযান চালানো হয়েছে। খবর পেয়ে এসব দালালচক্র পালিয়ে যাওয়ায় কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে তাদের কোন কর্মী যেন হাসপাতালের আউটডোর বা তার আশপাশে এসে রোগী ভাগিয়ে না নিয়ে যায়।’

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মেহেদি ইসলাম বলেন, হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে জানালে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

(এসআই/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২৪)