শেখ লিটন, চুয়াডাঙ্গা : পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গার শপিংমল গুলোতে ঈদ কেনাকাটা জমে উঠছে। তবে এবারও প্রতিবারের মতো ক্রেতাদের আকর্ষণীয় বাহারি রকমের পোশাক নজর কাড়ছে। ছেলেদের জন্য সিকুয়েন্স পাঞ্জাবি চাহিদার তুঙ্গে রয়েছে। আর নারীদের আগ্রহ বাহারি নাম আর ডিজাইনের বিভিন্ন রকমের থ্রি-পিচ এবং বিভিন্ন রকমের জামায়। তবে এবার পোশাকের দামেও আগুন ছড়াচ্ছে। তাই ক্রেতা সাধারণের সাধ থাকলেও সাধ্য অনেকটাই নেই। প্রতিদিন সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যার পর থেকে ঈদ বাজার জমে উঠছে। তবে বেশি ভিড় দেখা যাচ্ছে ছুটির দিনগুলোতে। চুয়াডাঙ্গা শহরের নিউ মার্কেট, পুরাতন গলির মার্কেট, আব্দুল্লাহ সিটি ও প্রিন্স প্লাজা ঘুরে কেনাকাটার এই চিত্র দেখা গেছে।

গ্রাম থেকে আসা এক ক্রেতা সাগর রহমান। তিনি এসেছেন সিকুয়েন্স পাঞ্জাবি কিনতে। সাগর গ্রাম থেকে শুনতে পেয়েছেন যে সিকুয়েন্স পাঞ্জাবির কদর এবার বেশি। দেখতেও চোখ জুড়ানো ঝলমলে। তাই সে আর অপেক্ষা না করেই খুব আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে পাঞ্জাবি ক্রয় করেছেন। বাহারি নামের এই পাঞ্জাবি যেমন ক্রেতা সাধারণের কাছে নজর কেড়েছে তেমনি দামটাও যেন আকাশ ছোঁয়া।

এই প্রথম ছেলেদের জন্য ঈদের চমক ভারতীয় তৈরি পোশাক সিকুয়েন্স পাঞ্জাবি। এই পোশাকের দাম ২-৩ হাজার টাকা। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আয়ের কাছে এই পোশাকটা যেন স্বপ্ন হয়ে হাতছানি দিচ্ছে। দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই পছন্দ করেও কিনতে পারছেন না। আবার সিকুয়েন্স পাঞ্জাবি বিক্রি কদর বেড়েছে বলে পাঞ্জাবি ফিটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে টেইলার্সের দর্জি ও কারিগররা।

এবার মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট কোন পোষাক না আসলেও আগ্রহ ভারতীয় থ্রি-পিচ ও জামাতে। বিভিন্ন নামের পোশাক নজর কাড়ছে নারীদের। মানভেদে এবার থ্রিপিচের দাম ১-৩ হাজার টাকা। আর পাকিস্থানী তৈরির বাহারির রকমের থ্রি পিচের দাম প্রায় ৪ হাজার টাকা। দাম বেশি হলেও বেশ জমজমাট নারী পোষাকের দোকান। এছাড়াও ছোট মেয়েদের জন্য নজর কাড়ছে বাহারি রকমের রংবেরংয়ের জামা। এই পোশাকের দোকানে উপচে পড়া ভিড় জমতে দেখা গেছে।

গৃহবধূদের জন্য নজর কাড়ছে কাঞ্জীবরণের শাড়ি। যার দাম দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। এই শাড়ির দামও এবার বেড়েছে। আলসাপরি শাড়ির দাম এবার ৫০০ টাকা বাড়তি হয়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানেও যেন শাড়ি কেনা বেচার ধূম পড়েছে। আর নিম্ন বিত্তদের জন্য ৭০০ টাকা দরে পাকিজা শাড়ি কেনা-বেচা লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে কাপড় ব্যবসায়ীরা জানান, গতবারের থেকে এবার সব ধরনের পোশাকের দাম বেশি। প্রতি পোশাকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি। ডলার সংকটের কারণে পোষাকের দাম বেড়েছে। এবার ক্রেতাদের নজর ইন্ডিয়ান ও বিভিন্ন দেশের পোশাকে। দেশি তৈরির পোশাকে খুব একটা আগ্রহ নেই। সকাল ১১ টার দিকে আর বিকাল ও সন্ধ্যার পরে বিক্রির ধুম পড়ছে। আশা করছি সামনে থেকে আরও বেচাকেনা বাড়বে।

রাসেল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, মার্কেটে আসছিলাম সিকুয়েন্স পাঞ্জাবি কিনতে। দাম বেশি নিয়েছে তাও কিনেছি। আর এবার এই পাঞ্জাবি খুব চলছে। পাঞ্জাবিটা দেখতে অনেক সুন্দর। মার্কেট ঘুরছি দেখছি সব জিনিসের দাম বেশি। তারপরও মানুষ কেনাকাটা ভালো রকমি করছে।

আরেক ক্রেতা সুমাইয়া রহমান বলেন, এবার ঈদে মেয়েদের জন্য সেরকম কোনো জিনিস বা ভিন্ন রকমের থ্রীপিচ নেই। তবে ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানী তৈরি থ্রীপিচগুলো অনেক ভালো। বলা যায় সুতি কাপড়। আর এবার মেয়েদের জন্য বাহারি রকমের জামাও দেখছি খুব সুন্দর। তাই এবার আমরা খুব আনন্দের সাথে কেনাকাটা করছি। আর হরেক রকমের শাড়িও দেখছি। সবই যেন এবার বাইরের দেশের পোশাকের চাহিদা বেশি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বাজার কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম বলেন, জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা। এবার গতবারের থেকে বেশ জমজমাট বাজার। সকাল সন্ধ্যা সব সময় দেখছি বিপণী বিতানে বাহারি পোশাকে নজর কাড়ছে। তবে দাম কিছুটা বেড়েছে। ঈদ কেনাকাটায় যেন ক্রেতা প্রতারিত না হয় সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দাম বেশি নিলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন এই কর্মকর্তা।

(এসএল/এসপি/মার্চ ২৮, ২০২৪)