শেখ ইমন, শৈলকুপা : ব্রীজ ভেঙ্গে পড়েছে ২বছর। এখনও শেষ হয়নি মেরামত। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ১১টি গ্রামীণ রাস্তার সংযোগ সড়ক ব্যবহারকারী হাজারো মানুষ। প্রায় ৪ কোটি টাকার ব্রীজ নির্মাণ এবং সংযোগ সড়ক, ব্রীজের তলদেশ খনন-ড্রেসিং এর জন্য আরো প্রায় ১ কোটি টাকার কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পাউবোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী। কাজের ধীরগতি আর নানা অনিয়মে স্থানীয়দের ব্যানারে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও হয়েছে। 

এলাকাবাসী বলছেন, পাউবোর প্রধান সেচ খালের উপর অবস্থিত ব্রীজটি আড়াই বছর আগে ভেঙ্গে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুর্ণীতির কারণে এখনও কাজ শেষ হয়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন, ইট, বালি, পাথর সহ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নয়-ছয় করে কাজ শেষ করার পায়তারা চলছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, কাজ সঠিক হচ্ছে। কাজে কিছু অনিয়ম করায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৭লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাতলাগাড়ী বাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) ব্রীজ নির্মাণের। কাজের ধীরগতি আর নানা অনিয়মে শনিবার দুপুরে স্থানীয়দের ব্যানারে কাতলাগাড়ী বাজারে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় জনগনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এ মানববন্ধনে যোগ দেয়। এরপর তারা বিক্ষোভে অংশ নেয়।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া সেলিম হোসেন জানান, ব্রীজটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। ১১টি গ্রামীন সড়কের সংযোগস্থল এই ব্রীজ । তিনি অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুর্ণীতির কারণে আজও কাজ শেষ হয়নি, অনেকবার কাজ বন্ধও হয়ে গেছে।

নাজমুল হোসেন জানান,তারা জানতে পেরেছেন ব্রীজের সংযোগ সড়কে ৫৪ লাখ টাকা, পানি প্রবাহের সমতা ঠিক রাখার জন্যে ব্রীজের তলদেশ’র উভয় পার্শ্বে ১ কিলোমিটার খনন ও ড্রেসিং এর জন্যে ২৬ লাখ টাকা এবং কনক্রিটের ব্লক তৈরীর জন্যে ২৮ লাখ টাকা বরাদ্ধ হয়েছে। প্রায় কোটি টাকা বরাদ্ধ হলেও রাতের আঁধারে দায়সারা কাজ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাউবোর অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ।

প্রসঙ্গত, পাউবোর গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে ৩কোটি ৮৪লাখ টাকায় শৈলকুপার কাতলাগাড়ী সেচখালের উপর ব্রীজটির পূণঃনির্মাণ কাজ শুরু হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায় পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার মেসার্স আবুল কালাম আজাদ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ধীরগতি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালীতে আজো শেষ হয়নি। এদিকে সংযোগ সড়ক, ব্রীজের তলদেশের উভয় পাশে ড্রেসিং ও ব্লক তৈরীতে আরো প্রায় কোটি টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ওঠায় তৈরীকৃত ব্লক বুয়েটের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষাগার থেকে জানানো হয় তৈরীকৃত ব্লক খুবই নিন্মমানের। এরপর প্রায় ১ বছর কাজ বন্ধ থাকে। সম্প্রতি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেই নিম্নমানের পরিত্যক্ত ব্লকেই ফের কাজ শুরু করায় ফুসে উঠেছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর আরো অভিযোগ, ব্রীজের উভয় পার্শ্বে অন্তত ১ কিলোমিটার পানির প্রবাহের জন্য ঠিকমতো খনন ও ড্রেসিং না করায় তাদের সেচ ও কৃষি কাজ ব্যহত হবে। তাছাড়া লাখ লাখ টাকার বাড়তি বরাদ্ধ কি খাতে ব্যয় হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এলাকাবাসী।

এদিকে কাজের মান নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন অভিযোগ করে বলেন, ইট, বালি, পাথর সহ নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নয়-ছয় করে কাজ শেষ করার পায়তারা চলছে। কাজের অনিয়মের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কে অবগত করানো হলে তারা বলছেন, কোন অনিয়ম নেই, বাধা-বিপত্তি আসলেও কাজ শেষ করা হবে ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ব্রীজের পূণঃনির্মাণ কাজের মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হলেও মেয়াদ এবং অতিরিক্ত বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া নিম্নমানের ব্লক দেয়ার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখানে নতুন এসেছেন ব্রীজের কাজটি যাতে সঠিক হয় তার বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন।

(এসআই/এসপি/মার্চ ৩০, ২০২৪)