বিশেষ প্রতিনিধি : ইফতার পার্টির রাজনীতি দিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আবারও প্রকাশ্যে আসছে বিএনপি। সর্বশেষ পাঁচ বছর আগে বিএনপি জামায়াত নেতারা মুখোমুখি বসেছিলেন। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে বিএনপি যখন আন্দোলনের নামে মাঠে নেমেছিলো ঠিক তখনও সঙ্গে জামায়াত আছে কি নেই তার স্পষ্ট কোন উল্লেখ করেনি দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা জামায়াত অন্তর্ভূক্তি না চাওয়ার কারণে এতোদিন প্রকাশ্য সম্পর্ক নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেনি বিএনপি। আবারও নতুন করে আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে ইফতারি আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুরোনো শরিকের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করে নেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) তাদের একসঙ্গে আবারো ইফতারের টেবিলে বসাকে তাদের পুরনো সম্পর্কে নতুন পথচলা বলে মনে করেন অনেকে। অন্যদিকে রাজধানীতে বড় পরিসরে ইফতারের আয়োজন করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে প্রায় নয় বছর পর এতো বড় পরিসরে রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে ইফতার করে দলটি।

বৃহস্পতিবার রাজনীতিকদের সম্মানে বিএনপির ইফতার মাহফিলে জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ দলটির চারজন নেতা অংশ নিয়েছেন। তবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের দুই শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেউ অংশ নেননি।

রাজধানীর লেডিস ক্লাবে গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। সেখানেই এক মঞ্চে দেখা যায় বিএনপি – জামায়াত নেতাদের। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া মো. গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রমুখ।

ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। একটা দুঃসময় অতিক্রম করছি। এসময়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বক্তব্য শেষে ইফতারের আগে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক টেবিলে পাশাপাশি চেয়ারে বসেন এবং দুজনের মধ্যে তখন একান্ত আলাপচারিতা হতে দেখা যায়। এছাড়া অন্যান্য নেতারা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে জামায়াতের আয়োজনকে অ্যালার্মিং উল্লেখ করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির বলেন, তাদের এই রাজনীতি বরাবরই যৌথ ছিলো। এখানে কোন বিচ্ছেদ কখনো ঘটেনি। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা দৃশ্যমান সম্পর্কে হয়তো আসেনি। সেটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। আমি বারবারই বলেছি, বিএনপি ও জামায়াত সহোদর। তাদের জন্ম একই জায়গা থেকে হয়েছে। ফলে তাদের রাজনীতির ধরণ ও পথ একটাই।

শনিবারের ইফতারের আমন্ত্রিত কার্ডে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করেছেন। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ জুন হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনদের নিয়ে ইফতার করেছিল জামায়াতে ইসলামী। তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইফতারে অংশ নিয়েছিলেন।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০২, ২০২৪)