লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহরসহ উপজেলার সর্বত্র গরম চলাকালীন সময়ের মতো শীতেও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনা । সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন ২ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। সন্ধ্যার পরে আসলেও রাত অন্তত ২-৩ বার হয় লোডশেডিং। গত ১৫ দিনের নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এতে জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় পূর্বের মত গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভের বিষ্ফোরণ ঘটার আশংকা করা হচ্ছে।

এদিকে গত ৯ অক্টোবর রাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পেলে মানুষ আন্দোলনে নামে। এসময় বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষুব্ধ লোকজন রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালান। পুড়িয়ে দেন কার্যালয়ের একটি পিকআপ ভ্যানসহ সাতটি গাড়ি। আন্দোলনের পর বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতি হয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যুতের এ অবস্থার কারনে ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেএসসি পরীক্ষার্থীসহ ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখায় বিঘœ ঘটছে। এছাড়াও পৌর শহরের মিল, ফ্যাক্টরীর উৎপাদন ব্যাহত, ব্যবসা-বানিজ্য স্থবির, ব্যাংক, বীমা ও অফিস-পাড়ার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মক বেগ পেতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পূর্বের মত গ্রাহকরা রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পড়বেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।

স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এজন্য ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৪ মেগাওয়াট। তাছাড়া ৩৩ কেবির সংস্কার কাজ চলায় সকাল ৯ থেকে বিকাল ৪ টা পর্যান্ত পৌর শহরে বিদ্যুৎ সরবাহর করা যাচ্ছে না। এ কারনে রাতে ৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে ২ ঘন্টা লোডশেডিং হয়। আর গ্রামে ২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে ১ ঘন্টা লোডশেডিং হয়।

রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম সুধাসচন্দ্র রক্ষিত মোবাইল ফোনে বলেন, ৩৩কেবির সংস্কারের কাজ চলায় চাহিদানুযায়ী চৌমুহনী গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে সংস্কার শেষে হলে রায়পুরে লোডশেডিং এর সমস্য অনেক কমে যাবে।

প্রসঙ্গত, লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা গত ৯ অক্টোবর রাতে রায়পুর পল্লী বিদ্যুতের কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর এবং কার্যালয়ের একটি পিক-আপ ভ্যান ও ৬টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আনা হয় লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ নাইন থেকে অতিরিক্তি পুলিশ। ঘটনার পরদিন রায়পুর পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মফিজ আহমেদ কবির প্রায় ২৫ লাখ টাকা ক্ষয়-ক্ষতি দেখিয়ে ৬ শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে রায়পুর থানায় একটি মামলা করে ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া রায়পুর থানার এসআই জহিরুল হক বাদী হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখ ও আরো দুই হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি আরও একটি মামলা করেন। তখর ওই মামলাগুতে ২৮ জনকে গ্রেফতার করে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। বতর্মানেও প্রায় ১৫ জন কারাগারে রয়েছেন।

সহিংস ওই ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকেও উচ্চপর্যায়ের থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মো. মাহবুব-উল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ওই সময় তদন্ত কমিটি রায়পুরে এসে তদন্ত কাজ শেষে করে চলে যান। পরে নিরপেক্ষ তদন্ত সাথে ওই কমিটির শুপারিশে রায়পুরে পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মাহফুজুর রহমানকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ-২ কার্যালয়ের ডিজিএম সুধাসচন্দ্র রক্ষিত রায়পুর কার্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

(এমআরএস/এএস/নভেম্বর ১৬, ২০১৪)