শিতাংশু গুহ


বিদ্রোহী কবিতায় কাজী নজরুল গেয়েছেন, ‘আমি ভগবানের বুকে এঁকে দেই পদচিহ্ন’। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় নজরুলকে ‘কাফের’ উপাধি দেয়া হয়েছিলো। নজরুলের জন্ম মুসলিম পরিবারে, তিনি মানুষ ছিলেন। ওই সময় ভারতবর্ষ অনেকটা লিবারেল ছিলো, তবু তিনি ‘ভগবানের’ পরিবর্তে ‘আল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহার করেননি, হয়তো সেটি শব্দ চয়নের জন্যে, হয়তো বা ভয়ে। এতে হিন্দুর বা ভগবানের কিচ্ছু আসে-যায়নি। কেউ এজন্যে নজরুলকে গালমন্দ করেনি। আমিও করছিনা, নজরুল নমস্য, আমার প্রসঙ্গ ভিন্ন, নজরুল দৃষ্টান্ত মাত্র।

কবি-সাহিত্যিকরা একটু উদার হ’ন। কেউ কেউ অবিশ্বাসী হ’ন। ক্ষতি নেই! মুসলিম ঘরে জন্ম নেয়া কবি-সাহিত্যিকরা যাদের ঈশ্বর তত্বে সংশয় আছে, বা সৃষ্টিকর্তাকে গালি দিতে চান, তাঁরা কিন্তু আল্লাহকে নন, ঈশ্বর বা ভগবানকে গালি দেন্। আমি এর কারণ ঠিক বুঝতে অপারগ। এটি কি শব্দ চয়ন? ঈশ্বর শব্দটি শ্রুতিমধুর, আপন, সুন্দর, ছন্দময় এটিই কি কারণ? নাকি নেতিবাচক অর্থে ‘আল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহারে ভীতি? হিন্দুরা তাঁদের ঈশ্বরকে গালি দেবেন সেটাই স্বাভাবিক, মুসলমানরা আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করেন না, বরং তাঁরা ঈশ্বরকে গালি দিতে পছন্দ করেন? কারণ কি?

ঈশ্বর শব্দটি স্নিগ্ধ, গালি দিলেও তিনি বা ভক্তরা কিছু বলেন না, এটি কি কারণ? সত্য যে, ঈশ্বর শব্দটি বাংলায় বহুল প্রচারিত ও ব্যবহৃত। আল্লাহ শব্দের ব্যবহার মুসলিমদের মধ্যে সীমিত। পাঠক, আমি ধর্ম নিয়ে কথা বলছি না, ঈশ্বর ও আল্লাহ এ দু’টি শব্দের বাংলা ভাষায় ব্যবহার নিয়ে কথা বলছি। আমার জানার ইচ্ছে, মুসলিম লেখকরা নেতিবাচক অর্থে আল্লাহ’র পরিবর্তে ঈশ্বর শব্দটি ব্যবহার করেন কি ভয় থেকে? নাকি শব্দ চয়নের জন্যে? নাকি ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা থেকে? দৃষ্টান্ত দেবো?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।