সালথা প্রতিনিধি : ফরিদপুরের সালথায় এলাকার প্রভাব বিস্তার নিয়ে গ্রামের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, মাঝারদিয়া গ্রামে এলাকার প্রভাব বিস্তার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হামিদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহিদুজ্জামান সাহিদের বিরোধ চলে আসছিল। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সাহিদের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন ইউপি সদস্য কবির হোসেন ও হামিদের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন তার ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন।

ওই দুই গ্রুপের মধ্যে চলমান বিরোধের জেরধরে শনিবার বিকেলে উভয় গ্রুপের কয়েকশ লোক দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা, সড়কি-ভেলা, টেটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায় পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকঘন্টা চলে এ সংঘর্ষ। সংঘর্ষচলাকালে হামিদের সমর্থক বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারী ও আজিজ মোল্যার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়।

এতে উভয় গ্রুপের অন্তত ২৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারী (৭২), আহাদ ব্যাপারী (৩২), শাখাওয়াত ব্যাপারী (২৫), মজিদ ব্যাপারী (৩০), আলমগীর ফকির (৩৮), আজিজ মোল্যা (৪৭), বাসার মোল্যা (৫৫), হাসিবুল মোল্যা (২২), হানিফ মোল্যা (৪২), সেন্ট ব্যাপারী (৩১), ফরিদ মোল্যা (৫০), চানমিয়া শেখ (৪০), মনির মোল্যা (২৫), আকবর শেখ (৩২), হৃদয় মোল্যা (২০), আমরান মোল্যা (২৮), রেজাউল শেখ (৫০) ও সুমন মোল্যাসহ (৩৫) অন্তত ২০ জনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে সংঘর্ষের ঘটনায় এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। রবিবার দুপুরে হাবিবুর রহমান হামিদের ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন বলেন, সাহিদ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। শনিবার বিকেলে সাহিদের সমর্থক ইউপি সদস্য কবির হোসেনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারীর ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর পায়ের রগ কেটে দেয়। এমনকি তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় আমার দলের লোক ঠেকাতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়।

ইউপি সদস্য কবির হোসেন বলেন, শনিবার বিকেলে ফারুকের সমর্থক বক্কর মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে আমার সমর্থক মনির ও সুমন মাঝারদিয়া বাজারে যাচ্ছিল। এ সময় তাদেরকে ধাওয়া দেয় ফারুক ও বক্কর মেম্বারের লোকজন। এ নিয়ে পরে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আমাদের সমর্থক জালাল শিকদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।

রবিবার দুপুরে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফায়েজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৭ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখনো উভয় পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এএন/এসপি/এপ্রিল ১৪, ২০২৪)