স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে তার দেয়া বক্তব্য গণমাধ্যমে বিকৃত ও খণ্ডিতভাবে এসেছে। এজন্য এই বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গণমাধ্যমকে পুরো বক্তব্য শুনে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান। এই সুযোগে বিএনপি-জামায়াত চক্র কুৎসা রটাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
 

সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। তার পরে আমরা দেখব। তার এই বক্তব্যে দল ও বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার ওপর ক্ষুব্ধ হন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এইচটি ইমাম তার নিজের দেয়া বক্তব্য থেকে সরে এসে বলেন, ওই দিন আমি যা বলেছি তা হচ্ছে, যারা লিখিত পরীক্ষায় উন্নীত হবেন তারাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি পাবেন। সেদিন আমি তাদেরকে কঠোর অনুশীলন করে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার পরামর্শ দিই। কারণ আমরা একটি দায়িত্বশীল প্রশাসন চাই। আর এটা করতে হলে মেধাবীরাই চাকরিতে সুযোগ পাবেন।

ইমাম বলেন, ১২ নভেম্বর আমি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য বলেছিলাম। একটি হলো লিখিত পরীক্ষা ভালো করতে হবে। কারণ ১০০০ নম্বর হচ্ছে লিখিত পরীক্ষায়। সেখানেই ভাইভার নম্বরে কিছু করার থাকে না। লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভাও ভালো করতে হবে। এজন্য যা যা করা দরকার তাই করবো। প্রয়োজনে আমি নিজেই তোমাদের কোচিং করাবো।

তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে বলেছি ভাইভায় গিয়ে কিভাবে প্রশ্ন-উত্তর, সালাম দিতে হবে সেটা শিখাবো। কারণ বিএনপি আমলে একটি বিশেষ ভবনে বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিতো। আমাদের সে অভিপ্রায় নেই। সেই অভিপ্রায় না থাকার কারণেই সাহসিকতার সঙ্গে বলেছি, লেখাপড়া শিখে বিএসএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে।

এইচ টি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে ওই সভায় বলেছিলেন, নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদেরকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে তার বক্তব্যের বাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ওই সময় আমি সরকারে কেউ ছিলাম না। ওই সময় প্রশাসনে মোবাইল কোর্ট করানোর কথা প্রশ্নই ‍ওঠে না। তবে আমি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করেছি।

তিনি দাবি করেন, প্রশাসনিক কোনো হস্তক্ষেপ না করেই আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা এবং বিএনপি জামায়াত চক্রের ভোট প্রতিরোধে নির্বাচনী এলাকার প্রশাসনকে জানিয়েছি। বিভিন্ন অভিযোগ বিধি মোতাবেক প্রতিকার চেয়েছি। এই সময়ে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট করার কথা অনুরোধ করেছি। আমি যা করেছি তা নির্বাচনী আইন বিধি মেনে করেছি। আর আমাদের ‘রিক্রুট’ করা মানে সব প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাকে বুঝিয়েছি। যাদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, মিডিয়া তার বক্তব্যকে যেভাবে উপস্থাপন করেছে তা আদৌ সত্য নয়। তিনি বলেন, আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যে কারণে জাতি বিভ্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরো বলেন, সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপিত হওয়ায় বিএনপি ও জামায়াত চক্র তা নিয়ে পরে কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। তবে যারা কুৎসা রটনায় লিপ্ত রয়েছেন তারা সফল হবেন না।

এইচটি ইমাম বলেন, ধুম্রজাল সৃষ্টি করে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাধা দেয়ার ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। আমার বক্তব্য যদি পুরো প্রচার করা হয় তাহলে সব বিভ্রান্তির অবসান হবে। এসময় তিনি গণমাধ্যমকে কোনো বক্তব্য খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন না করারও অনুরোধ করেন।

‘মিটিং ডেকে সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন এইচটি ইমাম’ গণমাধ্যমের এমন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, আমি গতকাল রবিবার মিটিংটি ডাকিনি। ডেকেছেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। আমি আজকের সংবাদ সম্মেনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

বি্বিসি’র সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। তিনি বিশ্রামে আছেন। এ কারণে আমি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে তাকে বিরক্ত করিনি। তবে আজকের সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে আবগত আছেন। তিনি প্রকারান্তে আমাকে আমার বক্তব্য ব্যাখ্যা করতে বলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে এইচ টি ইমাম দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন। তবে দৈনিক যুগান্তরে আবদুল গাফফার চৌধুরীর আজকের কলামটি পড়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

(এমএম/এএস/নভেম্বর ১৭, ২০১৪)