আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : স্বাদু পানির দেশী প্রজাতির মৎস্য অঞ্চল হিসেবে পরিচিত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় ভরা মৌসুমেও শুটকী পল্লীর জেলেদের মুখে হাসি নেই। ভরা মৌসুম সত্বেও মাছের আকালের কারণে হতাশায় ভুগছে এলাকার শুটকী পল্লীর সাথে জীবিকা নির্বাহ করা শতাধিক মৎস্যজীবি পরিবার। 

রাজাপুর গ্রামের শুটকী ব্যবসায়ি অবনী রায় জানান, এ অঞ্চলের শতাধিক পরিবার শুটকি মাছের ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে এক পাশে নদী অববাহিকা এলাকা অন্য পাশে কোটালীপাড়ার বিল এলাকার মধ্যবর্তী উপজেলার পয়সারহাট-ত্রিমুখি-রাজাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে শুটকি পল্লী। এ অঞ্চলের সু-স্বাদু মিঠা পানির নানা প্রজাতির শুটকী মাছ দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা হয়। বিশেষ করে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট অঞ্চল ও ভারতের আগরতলা পর্যন্ত এখানকার মাছের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। তবে আগের তুলনায় সরপুটি, পাবদাসহ দেশী অনেক প্রজাতীর মাছ এখন আর পাওয়া যায়না।

শুটকী পল্লীর সাথে জড়িত পরিবারগুলো অধিক লাভের আশায় বছরের আশ্বিন মাসের প্রথম থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ছয় মান শুটকির কাজে নিয়োজিত থাকে। তারা মাছ কিনে আশ ছাড়িয়ে রোদে শুকিয়ে বিক্রির উদ্যেশ্যে মজুদ রাখেন। দেশী-বিদেশী পাইকাররা এসে মাছ কিনে নিয়ে যায়। আবার মোকামে গিয়েও মাছ বিক্রি করা যায়। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়িই মহাজনী দাদন ও স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে ঋণগ্রস্থ হয়ে মাছের ব্যবসা করলেও মৌসুমের শেষ পর্যায়ে গিয়ে ওই দাদন ও ঋণের টাকা পরিশোধ করে তাদের হাতে আর তেমন কোন সম্বল থাকেনা। মৌসুম শেষে তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশা।

প্রায় একযুগ পূর্বে আগে ভৌগলিক পরিবেশের কারণে বানিজ্যিক ভাবে গড়ে ওঠে পয়সারহাট-রাজাপুর-ত্রিমূখী-শুটকী পল্লী। এই শুটকী পল্লীতে দেশী প্রজাতীর বিভিন্ন প্রকার মাছের মধ্যে পুঁঠি, শৌল, টেংরা, খলশা, পাবদা, কৈ, শিং, মাগুর, মেনি, ফলি, বজুরী, বাইন মাছ উল্লেখযোগ্য। এপল্লীর মাছগুলো প্রাকুতিক নিয়মে রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য রাখা হয়। এখানে ফরমালিনের মত বিষাক্ত কোন দ্রব্য মাছে মেশানো হয়না।

অবনী রায় জানান আরও জানান, চাহিদার মধ্যে ক্রেতাদের প্রধান আকর্ষণ থাকে পুটি মাছের উপর। প্রতি মন পুঠি মাছ তাদের কিনতে হচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকা দরে। প্রতি মন বাইন মাছের দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, বুজরী ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা, রশাল মাছ ৪ হাজার ২শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

অপর ব্যবসায়ী মনমথ রায়, অশোক রায়, সোবহান মিয়া, জয়নাল চৌকিদার, অবনী রায়, মঙ্গল অধিকারী, নরেশ তালুকদার বলেন, বাজার থেকে ১মন কাচামাছ ক্রয় করে শুকালে ১৫-২০ কেজি শুটকি মাছ পাওয়া যায়। গড়ে প্রায় তিনমন কাঁচা মাছ শুকালে এক মন শুটকি মাছ পাওয়া যায়। গত বছর এক মন শুটকি পুঁটি মাছ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়েছিল। এবছর সেই শুটকি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ কাঁচা মাছ তাদের পূর্বের চেয়ে কয়েকগুন বেশী দামে কিনতে হচ্ছে। ওই পল্ল¬ীর মাছ কাটার কাজে নিয়োজিত রাজাপুর গ্রামের সন্ধ্যা অধিকারী, অধিকারী, আয়না বেগম, পপি অধিকারী, শোভা রানী জানান, বছরে ছয় মাস মাছ কাটার সাথে নিয়োজিত থাকলেও বাকি ছয়মাস কাটে তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে। তারা আরও জানান, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করছে। মাছ কেটে যা আয় করি তা দিয়ে বহুকষ্ঠে জীবন যাপন করছি। তারা আরো বলেন, বর্তমানে শুকনা মৌসুমের শুরুতে মাছ বেশী পাওয়া গেলেও মাঝামাঝি সময়ে বিলে মাছ কম থাকায় তাদের দুঃখ দুর্দশা বেড়ে যায়। শুকটি পল্ল¬ীর ব্যবসায়ী রাজাপুরের অবনী রায় বলেন, সরকারীভাবে সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ায় প্রতি বছরই তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়তে হচ্ছে। তাই শুটকি পল্ল¬ীর সাথে জড়িত মৎস্য জীবিরা সরকারের সংশ্লিস্ট বিবঅগের কাছে সহজ শর্তে ঋণের দাবি জানিয়েছেন।

(টিবি/এএস/নভেম্বর ১৭, ২০১৪)