শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরামপুর রায়হান ক্লিনিকে মাইমুন্না আক্তার মীম (১৮) নামের এক প্রসূতির সিজারের সময় পেটের মধ্যে গজ ও ফুল রেখে সেলাই দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ অভিযোগ গাইনী চিকিৎসক ডাঃ মোছাঃ তাহেরা খাতুন লাভলীর বিরুদ্ধে। প্রসূতির পিতা এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এনিয়ে ৩ সদস্যে একটি তদন্তের টিম গঠন করেন দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন।

বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মেডিকেল অফিসার ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার এই তিন জনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল)বিকেলে এ কমিটি গাঠন করা হয়েছে।

প্রসূতি মাইমুন্না আক্তার মীম নবাবগঞ্জ উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামের ইসাহাক আলীর স্ত্রী।

প্রসূতির পিতা মতিয়ার রহমান বলেন, আমার মেয়ের প্রসব ব্যাথা উঠলে, গত ৬মার্চ বিরামপুর রায়হান ক্লিনিকে ভর্তি করি। পরে ঐদিন ডাঃ তাহেরা খাতুন আমার মেয়ের সিজার করেন। তিনদিন পর মেয়েকে রিলিজ দেয় এবং বাড়ি নিয়ে যায়। ৭দিন পর সেলাই কাটা হয়। তার ২৭দিন পর মেয়ের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। আবার চলতি মাসের ৩ তারিখে রায়হান ক্লিনিকে ভর্তি করি। ভর্তি করেও কোন মতে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। শেষে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার মেয়ে অপারেশন করেন। তখন ডাক্তাররা বলেন মেয়ের পেটের মধ্যে গজ ও অনেক ময়লা ছিলো। এছাড়াও আপনার মেয়ের জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছিল,সে ভবিষ্যৎ আর মা হতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে আর কোনদিন মাতৃত্বের স্বাদ নিতে পারবে না, তার জীবন শেষ। আমি আমার মেয়ের এই ক্ষতির ন্যায্য বিচার চাই। সিভিল সার্জনের নিকট অভিযোগ করেছি। আমি চাই আর কোন মেয়ের যেন এমন সর্বনাশ না হয়।

প্রসূতি মাইমুন্না আক্তার মীম বলেন, গত ৬মার্চ আমার প্রসব ব্যাথা উঠে। ডাঃ তাহেরা ম্যাডাম আমার সিজার করেন। পরে আমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। দিনাজপুরে আবার আমার অপারেশন করে। অপারেশন করে আমার পেট থেকে গজ আর অনেক ময়লা বের করা হয়। ডাক্তাররা বলেন আমি আর কোন দিন ভবিষ্যতে মা হতে পারবো না।

রায়হান ক্লিনিকের ম্যানেজার মাহবুব আলম বলেন, গত ৬মার্চ আমাদের ক্লিনিকে মাইমুন্না আক্তার মীম নামের একজন প্রসূতি ভর্তি হয়। ডাঃ মোছাঃ তাহেরা খাতুন লাভলী ম্যাডাম তার সিজার করেন। কিছু দিন পর ঐরোগীর রক্তক্ষরণ হয় এবং আমাদের এখানে ভর্তি করে। সেদিন তাহেরা ম্যাডাম ছিলেন না, দিনাজপুর ছিলেন। শেষে আমাদের ক্লিনিকের এ্যাম্বুলেন্স করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলাম রসূল রাখি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোছাঃ তাহেরা খাতুন লাভলীর বিরুদ্ধে একজন প্রসূতির সিজার নিয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে। আমি ও দুইজন মেডিকেল অফিসার সহ তিন সদস্যের একটি তদন্তের টিম গঠন করে দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঐপ্রসূতীর পরিবারের লোকজনকে ডাকা হয়েছে, তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে গাইনী চিকিৎসক ডাঃ মোছাঃ তাহেরা খাতুন লাভলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। তার পেটে কোন গজ বা ফুল রাখা হয়নি। এটা আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। যদি দিনাজপুর মেডিকেল রিপোর্টে আমার ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে আমি আমার সব আপরাধ মেনে বাধ্য থাকবো।

(এসএএস/এএস/এপ্রিল ২৫, ২০২৪)