স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল মির্জাপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার লতিফপুর ইউনিয়নের লতিফপুর নৌকারচালা, শেরখারচালা, ট্যাকপাড়া ও কদমা গ্রামের লাল মাটির টিলা ভেকু মেশিন দিয়ে কাটছেন একদল চিহ্নিত মাটি ব্যবসায়ী। প্রকাশ্য দিবালোকে মাটি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর দেওয়ানসহ তার সহযোগী আমিনুর, আবিদ শিকদার, শহিদুল দেওয়ান ও জুলহাস টিলার লাল মাটি কাটছেন।

এই মাটি দিনে-রাত ভারি ড্রাম ট্রাকে করে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি।

মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রশাসন ও উপজেলাবাসী যেন নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নির্বিচারে পাহাড়ের লাল মাটি কেটে নেওয়ায় পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।

মাটি ভর্তি অভারলোডের ভাড়ি ডাম্প ট্রাক চলাচল করায় গ্রামের রাস্তা ও বিভিন্ন আঞ্চলিক পাকা সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবাদী ফসল, সবজি খেত ও রাস্তার পাশের বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে।

প্রশাসন বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালালেও অজ্ঞাত কারণে লতিফপুর ইউনিয়নে অভিযান চালানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়ন নিয়ে মির্জাপুর উপজেলা গঠিত। এ উপজেলার গোড়াই, আজগানা, লতিফপুর, বাঁশতৈল ও তরফপুর ইউনিয়ন পাহাড়ি এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই পাঁচ ইউনিয়নে ছোট বড় বেশ কয়েকটি লাল মাটির টিলা রয়েছে। একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। প্রত্যেক ভেকুতে ৮ থেকে ১০টি ডাম্পট্রাক চলাচল করে। কয়েকটি ভেকুতে মাহিন্দ্র দিয়েও মাটি পরিবহন করা হয়।

মাটি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর দেওয়ান দম্ভ করে বলেন, 'সবাই মাটি কাটে রাতে আর আমি কাটি দিনে-রাতে ২৪ ঘন্টা। প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের ম্যানেজ করেই দিনে-রাতে মাটি কাটছি। পত্রিকায় যা পারেন লিখেন আমার কিছুই হবে না’।

কাউকে পরোয়া করছেন না তিনি। মাটি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাটি কাটার আগে কাটা হচ্ছে গজারি, আকাশমনি, কাঠাল গাছ, বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ভেকু মেশিন দিয়ে যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে এতে কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি ও পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র হুমকির হুমকির মুখে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, রাতে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় বিপুল সংখ্যাক মাটির ডাম্পট্রাক চলাচল করে। এছাড়া দিনের বেলায়ও ডাম্পট্রাক ও মাহিন্দ্র দিয়ে মাটি পরিবহন করা হয়। এতে রাস্তা ও পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতি হচ্ছে। মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না প্রতিদিন তা বাড়ছে।

লতিফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ শিকদার বলেন, লতিফপুর ইউনিয়নে টিলার লালমাটি কাটা বন্ধের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার সূত্রধর জানান, মির্জাপুরে টিলার লাল মাটি কাটায় ইতোমধ্যে ১৪ জন মাটি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নামে মামলা করা হয়েছে।

মির্জাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান জানান, প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে ভেকু মেশিন ও ডাম্পট্রাক আটক করে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে মাটি ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

(এসএএম/এএস/এপ্রিল ২৬, ২০২৪)