মাগুরা প্রতিনিধি : দাতা সংস্থা ইউএসএইডের অর্থ সহয়তা বদ্ধ হলেও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন নিজেদের উদ্যোগে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটি ইউএস এইডের সহযোগিতায় ‘প্রতিভা প্রকল্পের’ আওতায় ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য এ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। কিন্ত ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে  ইউএসএইডের আর্থিক সহায়তা বন্ধ হওয়ায় এর সাথে জড়িত শিক্ষক ও কর্মচারিদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।  

কিন্তু শিশুদের শিক্ষার ক্ষতির বিষয়টি চিন্তা করে নিজেদের উদ্যোগে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রম পরিচলনা অব্যাহত রেখেছে সংস্থাটি। স্থানীয় সমাজ সেবক ও জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সহযোগিতা এখন এটি পরচালনার উদ্যোগ গ্রহন করেছে তারা।

জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিভা প্রকল্পের আওতায় ২০১০ সাল থেকে মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দান কার্যক্রম শুরু হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ানে ভর্তির আগে শিশুদের জন্য তৈরি করা ও ঝরে পড়া রোধ করা।

তাদের দেয়া তথ্য মতে, মাগুরা সদর ও মহম্মদুর উপজেলায় ১২০ টি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ৩ হাজার ৬০০ দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যশোর, ঝিনাইদহ ও নড়াইল জেলায় ৪৮০ টি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪ হাজার ৪০০ শিশুকে শিক্ষা দানের এ কার্যক্রম চলমান আছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৩০ জন শিশুকে শিশু বান্ধব, মানসম্মত, সল্প খরচে ও সল্প ব্যায়ে উপকরণ সমৃদ্ধ শিক্ষা দানের পদ্ধতিতে শিশুরা শিক্ষা গ্রহণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মৌলিক ও প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহনের জন্য ভর্তি হয়ে আসছে। এর ফলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়া শিশুদের মৌলিক বা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহনের সফলতা খুবই সন্তোষজনক এবং ঝরে পড়ার হার কমেছে অনেক খানি। এ কারণে বিদ্যালয় গুলো চালু রাখার জন্য শিশুদের অভিভাবকসহ স্থানীয়রা জোর দাবি জানিয়েছেন। এসব বিদ্যালয় পরিচালনায় প্রতিমাসে গড়ে মাগুরাসহ অন্যান্য এলাকায় ১২ লাখ ১ হাজার টাকা। এ খরচ বহন করা জাগরনীর একার পক্ষে সম্ভব হয়ে না উঠায় এটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমাজ সেবক ও জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করলে এ কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। ২০১০ সালে এ কর্যক্রম চালু হবার পর জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় জন প্রতিনিধি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা এর কার্যক্রম পরিদর্শন করে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

মাগুরা সদর উপজেলার ছোটফালিয়া প্রতিভা প্রকল্পের প্রি-প্রাইমারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাজামা সুলতানা বলেন, জেলার প্রি-প্রাইমারি স্কুলগুলো মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাপক অবদান রাখছে। দরিদ্র শিশুরা এখান থেকে শিক্ষা গ্রহন করে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপযুক্তভাবে গড়ে উঠছে। সেই সাথে এটি ঝরে পড়া রোধে সহায়তা করছে। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষরা কিছুটা হলেও আর্থিক সহয়তা পাচ্ছেন। একারনে প্রি-প্রাইমারি বিদ্যালয়গুলো চালু রাখা জরুরী।

এ বিষয়ে জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আজাদুল কবির আরজু জানান, শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অংশ গ্রহনের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অব্যাহত রাখলে আগামী প্রজন্মের দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা জীবনের ভিত মজবুত হবে এবং তারা দেশের জন্য উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সামর্থ হবে। ইউএসএইড আর্থিক সহয়তা বন্ধ হওয়ায় এ বিদ্যালয় গুলোর খরচ বহন জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটি পরিচালনার জন্য সরকারসহ স্থানীয় সমাজ সেবক ও জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে আসলে শিশুদের শিক্ষাদান কার্যক্রম আরো বেগবান হবে। সহযোগিতার জন্য ৪৬, মুজিব সড়ক যশোর প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ এস এম সিরাজুদ্দোহা বলেন, জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশনের পরিচালিত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত সফল ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। স্বল্প খরচে দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের এসব স্কুল থেকে সময় উপযোগি শিক্ষা লাভ করছে। এটি বন্ধ হলে শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে। এ কারনে আগামী প্রজন্মের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার সর্বত্তম সফলতার জন্য সমাজ সেবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

(ডিসি/এএস/নভেম্বর ১৮, ২০১৪)