আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের গৌরনদী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. মুস্তাফিজুর রহমান পৌর সদরের চরগাধাতলী মহল্লার নিজ বাসভবনের তৃতীয় তলার ছাদে পোল্ট্রি খামার ও তৃতীয় তলায় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করেছেন।

এছাড়াও ডিগ্রী অর্জন না করেও তিনি নিজের নামের সাথে ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞ খেতাব ব্যবহার করছেন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, এটি ডায়াবেটিক হাসপাতাল হলেও এখানে দীর্ঘদিন যাবত চলছে সিজারিয়ান অপারেশনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে পরিবেশ ছাড়পত্র ও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন অনুমোদন ছাড়াই সম্পূর্ণ অবৈধ পথে তিনি দীর্ঘদিন যাবত চালাচ্ছেন রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য। এ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
গৌরনদীর সহকারি পুলিশ সুপারের কার্যালয় সংলগ্ন নিজ বাসভবনে ডা. মুস্তাফিজুর রহমান নিজের নামে ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার পর ওই ভবনের নিচ তলায় তিনি নিজস্ব চেম্বার, ফার্মেসী ও প্যাথলজি সেন্টার স্থাপন করেছেন। দ্বিতীয় তলায় তার নিজের পরিবারসহ কয়েকটি ভাড়াটিয়া পরিবার বসবাস করছেন। ভবনটির তৃতীয় তলার ছাঁদে কয়েক বছর আগে তিনি তৈরি করেছেন একটি পোল্ট্রি খামার। পোল্ট্রি খামারে লাভ বেশি তাই খামারটি অপসারণ না করে একই ভবনের তৃতীয় তলায় দু’বছর পূর্বে তিনি ১৫ বেডের একটি হাসপাতাল তৈরি করেন। একই ফ্লোরে তৈরি করা হয় একটি অপারেশন থিয়েটার ও পোষ্ট অপারেটিভ রুম। সম্পূর্ণরূপে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পুরুষ বাথরুম ঘেঁষে পোষ্ট অপারেটিভ রুমটি তৈরি করা হয়েছে। হরহামেশা পোল্ট্রি খামারের বর্জ থেকে দুর্গন্ধ ও নানা রোগ ছড়াচ্ছে। এতে শারিরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ হাসপাতালে আসা প্রসূতি মা ও সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া নবজাতকসহ অন্যান্য রোগীরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি বিধান অনুযায়ী এখানে অদ্যবধি কোন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়নি। অপারেশন করার জন্য এখানে নেই কোন সার্জন বা এ্যানেসথেসিয়া। তারপরেও এখানে দেদারছে চলছে সিজারিয়ান অপারেশনসহ অন্যান্য জটিল রোগের অপারেশন।
হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৩০১ নং কক্ষে রুবি বেগম, ৩০৪ নং কক্ষে হোসনেয়ারা বেগম ও একই কক্ষে সাহিদা বেগম নামের তিনজন প্রসূতি মাকে দেখা গেছে। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তাদের সন্তান প্রসব করানো হয়েছে। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ডা. মুস্তাফিজুর রহমান আত্মগোপন করেন।
তার ছেলে আরাফাত রহমান জানান, তাদের হাসপাতালে রোগী আসলে অন্যস্থান থেকে চিকিসক ভাড়ায় এনে প্রসূতি মায়েদের সিজারিয়ান অপারেশনসহ অন্যসব রোগীদের অপারেশন করানো হয়। চিকিৎসক বলতে তার বাবা ডা. মুস্তাফিজুর রহমান একা। অভিযোগ রয়েছে, ডা. মুস্তাফিজুর রহমান সরকারি চিকিৎসক হিসেবে চাকুরীতে কর্মরত থাকা সত্বেও অধিকাংশ সময় তিনি কর্মস্থলে না গিয়ে নিজের হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও তার দুই ছেলে হাসপাতাল দেখা শোনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। এখানে একজন টেকনিশিয়ান, দু’জন নার্স রয়েছেন।
হাসপাতালের রিসিপশনিষ্ট ও নার্সের দায়িত্ব পালন করা জুঁই আক্তার জানান, তিনি নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করেননি। তার পরেও এ হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত নার্সের দায়িত্ব পালন করছেন।

এখানকার রোগী ও মুরগীর খামারের বর্জ পাশ্ববর্তী পালরদী নদীতে ফেলার কারণে পানি দুষিত হচ্ছে। ওই হাসপাতাল থেকে মাত্র এক’শ গজ দুরত্বে গৌরনদী থানা মাদ্রাসা ও এতিমখানা অবস্থিত। মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে বসবাসকারী চার শতাধিক ছাত্র ও এতিম শিশুরা প্রতিদিন নদীতে গোসল করে। মুরগীর খামার ও হাসপাতালের বর্জে দুষিত হওয়া পানিতে গোসল করে তারা চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ডা. মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পোল্ট্রি খামারের বর্জ দিয়ে একটি বায়োগ্যাস প্লান তৈরি করা হয়েছে। তা দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ চলছে। হাসপাতালের ছাদে পোল্ট্রি খামার স্থাপন করায় পরিবেশ দুষিত হচ্ছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় অফিসের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস জানান, হাসপাতালের ওপরে মুরগীর খামার বিষয়টি তার জানা ছিলো না। তবে এ ঘটনায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল সিভিল সার্জন ডা. এটিএম মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একই ভবনে হাসপাতাল ও মুরগীর খামার থাকতে পারে না। এতে বার্ডফ্লু আক্রান্ত মুরগী থেকে হাসপাতালের রোগীরাও বার্ডফ্লু রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ব্যাপারে ডা. মুস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে।
(টিবি/এএস/মে ০২, ২০১৪)