সারা দেশে জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার্থী এই ছেলেমেয়েগুলোর জন্যে আমার খুব মায়া হয়- কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে সারা দেশে সবারই ধারণা হয়েছে এই পরীক্ষাটি জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যে করে হোক গোল্ডেন ফাইভ পেতে হবে।

(গোল্ডেন ফাইভ কথাটি কে আবিষ্কার করে বাচ্চাদের এতো বড় সর্বনাশ করেছে আমার খুব জানার ইচ্ছে করে) ছেলেমেয়েগুলোর ওপর যে চাপ দেয়া হয় সেটা একটা বিভীষিকার মতো। লেখাপড়ার নামে তাদের ওপর যে রকম নির্যাতন আর অত্যাচার করা হয় সে রকমটি মনে হয় পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এবারে যন্ত্রণাটি ষোল কলায় পূর্ণ হয়েছে ঠিক যখন তাদের পরীক্ষা দেবার কথা তখন হরতালের পর হরতাল। (রাজাকার আলবদর হয়ে এই দেশের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডে অংশ নেবে, সেই অপরাধে শাস্তি দেয়া হলে দেশে হরতাল ডেকে বসবে- জামায়াতে ইসলামীর এই কাজকর্মগুলো দেশের মানুষ কীভাবে নিয়েছে সেটি কী তাদের চোখে পড়েছে?)

জেএসসি পরীক্ষার আগে আগে এবং পরীক্ষা চলার সময় আমি হঠাৎ করে সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন বিভিন্ন জায়গা থেকে একই তথ্য পেতে শুরু করেছি। বিষয়টি একটু বললে সবাই বুঝতে পারবে। এই দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা স্কুলের হেডমাস্টার আমাকে তার একটা ছাত্রীর গল্প বললেন। সেই ছাত্রীর প্রস্তুতি ভালো নেই বলে হেডমাস্টার তাকে এই বছর পরীক্ষা না দিতে উপদেশ দিলেন। ছাত্রীটি তাকে জানাল, লেখাপড়ায় প্রস্তুতি তার ভালো না হতে পারে, কিন্তু তার পরীক্ষা অবশ্যই ভালো হবে। হেডমাস্টার জানতে চাইলেন, কীভাবে- মেয়েটি বলল পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে বহু নির্বাচনী (MCQ) নৈর্ব্যক্তিক ৪০ শতাংশ থাকে সে তার পুরোটা পেয়ে যাবে- কাজেই পাস করা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা নেই! হেডমাস্টার ভদ্রলোক খুবই দুঃখ নিয়ে আমাকে বললেন, মেয়েটি একটুও ভুল বলেনি। পরীক্ষার হলে একে অন্যের সাথে কথা বলে সঠিক উত্তর বের করে নেয়া এখন আর অন্যায় হিসেবে ধরা হয় না। পরীক্ষার হলের পরীক্ষকরা দেখেও না দেখার ভান করেন- কারণ তারা চান ছাত্রেরা দেখাদেখি করে ভালো মার্কস পেয়ে যাক সেটা ছাত্র-ছাত্রীর জন্যে ভালো, স্কুলের জন্যে ভালো, সরকারের জন্যে ভালো। পরীক্ষার হলে যেকোনো ছাত্র-ছাত্রী এখন এদিক সেদিক থেকে একটু সাহায্য নিয়ে পুরোটা লিখে ফেলতে পারে। হতাশ হেডমাস্টার আমাকে জানালেন, অনেক বড় বড় স্কুল কলেজের শিক্ষকরা এখন নিজের দায়িত্বেই তাদের ছাত্রদের প্রশ্নের উত্তর বলে দেন।

এর কিছুদিন পরেই একেবারে গ্রামের স্কুলের একজন হেডমাস্টার আমাকে জানালেন, তিনি তার স্কুলের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় খুব কড়াকড়ি করেন, তাদেরকে কোনোভাবেই দেখাদেখি করতে দেন না, যার জন্যে তার স্কুলের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার ফলাফল আশেপাশের অন্যান্য স্কুলের থেকে খারাপ। সে কারণে তার স্কুলের ছেলেমেয়েরা বৃত্তি খুবই কম পাচ্ছে, সেটা নিয়ে ভদ্রলোক খুবই চাপের মাঝে আছেন। আমি তাকে সেটা নিয়ে এতোটুকু চিন্তা না করে ছেলেমেয়েদের সৎ থাকা শেখানোটাতেই বেশি গুরুত্ব দিতে বলেছি। তিনি কতোদিন আমার উপদেশ শুনে সৎ থাকতে পারবেন, আমি জানি না।

তৃতীয় ঘটনাটা ঘটেছে আজকে। জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে এরকম একজনের বাবা আমাকে বললেন, সারা দেশে গোল্ডেন ফাইভের যে মহামারী শুরু হয়েছে আমি সেটার জন্যে দায়ী করেছি পরীক্ষার খাতায় ঢালাওভাবে বেশি বেশি মার্কস দেয়ার অলিখিত নির্দেশকে। আসলে এর জন্যে সমানভাবে দায়ী পরীক্ষার হলে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখাদেখি করার সুযোগকে। তার মতে, আজকাল পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করা, কথা বলাবলি করাকে কোনো অন্যায় বা দোষ মনে করা হয় না।

এক সময় পরীক্ষায় নকল করাটাকে আমরা সমস্যা হিসেবে দেখতাম। ছোট ছোট কাগজে গুটি গুটি করে লিখে নিয়ে আসা হতো এবং খুবই সাবধানে সেটা পরীক্ষার খাতায় টুকে নেয়া হতো। এখন তার প্রয়োজন হয় না, প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে ছেলেমেয়েরা বাসা থেকেই প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে আসতে পারে। জটিল সমস্যার সহজ সমাধান। পরীক্ষার ফলাফল ভালো করার জন্যে এতোই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, আমরা যেকোনো মূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফল ভালো করাতে চাই। ছোট ছোট শিশুদের আমরা এখন অন্যায় করাতে শিখিয়ে দিচ্ছি। এর চাইতে বড় অপরাধ কী হতে পারে?

আমি জানি আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢালাওভাবে এটা অস্বীকার করবেন। (প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যখন আমি চেঁচামেচি করেছিলাম তখন সেই সমস্যার সমাধান করা হয়েছিল অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। ঘোষণা দেয়া হয়েছিল যে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার গুজব ছড়াবে তাকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে!)

২.
ঠিক কী কারণ জানা নেই, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যখন কোনো ঝামেলা হয় তখন লোকজন সরাসরি আমাকে দায়ী করে! শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বড় বড় কর্মকর্তা কিংবা শিক্ষামন্ত্রীকে কেউ পায় না, কিন্তু আমাকে পাওয়া খুবই সহজ। আমাকে প্রচুর গালমন্দ শুনতে হয়। সবচেয়ে বেশি গালমন্দ শুনি ছোট ছোট বাচ্চাদের কৈশোর পার হতে না হতেই পিএসসি/ জেএসসি/এসএসসি এবং এইচএসসি এই চার চারটি ভয়াবহ পাবলিক পরীক্ষা দেয়ার নিয়ম করে দেয়ার জন্যে। অন্যদের সাথে আমিও যেহেতু শিক্ষানীতি কমিটির একজন সদস্য ছিলাম তাই অনেকেই ধরে নেয় এই ব্যাপারটিতে নিশ্চয়ই আমারও একটি হাত আছে! আমার মনে হয়, এখানে আসল বিষয়টা সবার জানা দরকার। আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি তৈরি করা হয়েছিল সেই কমিটি মোটেও চার চারটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেনি। মাত্র দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছিল। সেই খসড়া শিক্ষানীতিতে কী লেখা ছিল আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি:

২য় অধ্যায় ২৪ অনুচ্ছেদ: পঞ্চম শ্রেণি শেষে সকলের জন্য উপজেলা/ পৌরসভা/ থানা (বড় বড় শহর) পর্যায়ে স্থানীয় সমাজ-কমিটি ও স্থানীয় সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণি শেষে বিভাগ ভিত্তিক পাবলিক পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষাটি প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা নামে পরিচিত হবে।...

আমি সবাইকে লক্ষ্য করতে বলছি, এখন পিএসসি নামে একবারে অবুঝ শিশুদের যে পরীক্ষা নেয়া হয় সেটি কিন্তু খসড়া শিক্ষানীতিতে নেই। প্রথম পাবলিক পরীক্ষা হওয়ার কথা অষ্টম শ্রেণি শেষে। পঞ্চম শ্রেণির শেষে তাদের শুধু একটা সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার কথা।

এবারে দেখা যাক এসএসসি এবং এইচএসসি সম্পর্কে খসড়া শিক্ষানীতিতে কী লেখা আছে:

৪র্থ অধ্যায় ১৩ অনুচ্ছেদ: দশম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা আঞ্চলিক পর্যায়ে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে এবং এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি প্রদান করা হবে (বিস্তারিত অধ্যায় ২১)। দ্বাদশ শ্রেণি শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং নাম হবে মাধ্যমিক পরীক্ষা।...

অর্থাত্ শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি কিন্তু মোটেও চার চারটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেনি তারা মাত্র দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছে, একটি অষ্টম শ্রেণির শেষে একটি দ্বাদশ শ্রেণির শেষে।

তাহলে আমরা কেন চার চারটি পাবলিক পরীক্ষা নিচ্ছি? ব্যাপারটা বোঝার জন্যে এবারে আসল শিক্ষানীতির দিকে তাকাতে হবে। দেশের শিক্ষাবিদেরা যে শিক্ষানীতি জমা দিয়েছেন তার ওপর ছুরি চালিয়েছেন আমাদের আমলারা। জাতীয় শিক্ষানীতিতে লেখা হয়েছে এভাবে।

২য় অধ্যায় ২৭ অনুচ্ছেদ “পঞ্চম শ্রেণি শেষে উপজেলা/ পৌরসভা/ থানা (বড় বড় শহর) পর্যায়ে সকলের জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অষ্টম শ্রেণি শেষে আপাতত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা নামে একটি পাবলিক পরীক্ষা আনুষ্ঠিত হবে এবং এই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড দ্বারা পরিচালিত হবে।”

সবাইকে লক্ষ্য করতে বলি, অষ্টম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা হওয়ার কথা জাতীয় শিক্ষানীতিতে তার নামটা পাল্টে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো বড় পরিবর্তন নেই। সবচেয়ে বড় কথা পঞ্চম শ্রেণির শেষে এখন পিএসসি নাম দিয়ে একেবারে অবুঝ শিশুদের যে পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হয় জাতীয় শিক্ষানীতিতে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। শিক্ষানীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাদের আমলারা। এবারে আমরা যাই এসএসসি এবং এইচ,এস,সি পরীক্ষার অংশটুকুতে। খসড়া শিক্ষানীতিতে শিক্ষাবিদেরা দশম শ্রেণি শেষে কোনো পাবলিক পরীক্ষার সুপারিশ করেননি, কিন্তু পরিবর্তিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে লেখা হয়েছে এভাবে:

৪র্থ অধ্যায় ১৪ পরিচ্ছেদ: “দশম শ্রেণি শেষে জাতীয় ভিত্তিতে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষার নাম হবে মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি প্রদান করা হবে। দ্বাদশ শ্রেণির শেষে আরো একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, এর নাম হবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।....”

অর্থাত্ শিক্ষাবিদদের দেয়া শিক্ষানীতিতে দশম শ্রেণি শেষে কোনো পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়নি, জাতীয় শিক্ষানীতিতে সেটি আবার ফিরে এসেছে। তারপরও কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায়, জাতীয় শিক্ষানীতিতে উল্লেখ না থাকার পরও পঞ্চম শ্রেণি শেষে কীভাবে একটা পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে? এই সিদ্ধান্তগুলো কারা নেন? কীভাবে নেন? কেন নেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা নেই।

৩.
যারা ভাবছেন শিক্ষানীতিতে নেই এই যুক্তি দেখিয়ে যদি আমাদের বাচ্চাদের অন্তত একটি পাবলিক পরীক্ষা থেকে রক্ষা করা যায় সেটাই খারাপ কী? তাদের সেই আশাতেও গুড়ে বালি! আমার কাছে শিক্ষা আইন ২০১৪ এর একটি খসড়া এসেছে সেখানে লেখা আছে এভাবে:

১২ (২): “পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির একাডেমিক বৎসর শেষে বার্ষিক পরীক্ষার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড বা অনুমোদিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যথাক্রমে প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেট (PSC) পরীক্ষা/ এবতেদায়ি মাদরাসা পরীক্ষা (EMC) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (JSC)/ জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (JDC) পরীক্ষা দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হইবে।....”

অর্থাৎ শিক্ষানীতিতে শিশুদের উদ্ধার করার যে একটি ছোট্ট সুযোগ ছিল শিক্ষা আইনে সেই সুযোগটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

৪.
যারা শিক্ষানীতি কিংবা শিক্ষা আইনের কটমটে ভাষায় একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন তাদের সহজ ভাষায় বলে দেয়া যায় যে, মূল শিক্ষানীতিতে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই সময়টুকুতে মাত্র দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল। সেটি পরিবর্তন করে জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিনটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে (কীভাবে জানি না)। জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চারটি পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হয়।

সব স্কুলেই পরীক্ষা নেয়া হয়, সেই পারীক্ষার প্রশ্নপত্র যদি স্কুলের শিক্ষকের পরিবর্তে কেন্দ্রীয়ভাবে আসে তাতে দোষের কিছু নেই। সারা দেশের সব শিশুকে যদি একই মানদণ্ডে বিচার করা যায় তাতেও দোষের কিছু নেই, বরং পুরো দেশের প্রত্যেকটা অঞ্চলের লেখাপড়ার মানের একটা ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যাপারটা সেভাবে থাকেনি। লেখাপড়ার আসল উদ্দেশ্য থেকে সবাই অনেক দূরে সরে গেছে। এখন পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ হচ্ছে প্রধান উদ্দেশ্য আর এর পুরো চাপটুকু সহ্য করতে হচ্ছে ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের। আগে ছেলেমেয়েরা একটু বড় হলে বাবা-মায়েরা তাদেরকে কোচিং সেন্টারে নিয়ে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার কায়দা-কানুন শিখিয়ে দিতেন। এখন সেটা শুরু হয় সেই পঞ্চম শ্রেণি থেকে। মোটামুটি একটা ভয়াবহ অবস্থা।

আমার মনে হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটার সবকিছু নতুন করে দেখার সময় হয়েছে। একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় সময় হচ্ছে শৈশব, আমরা বুঝে হোক না বুঝে হোক আমাদের শিশুদের শৈশব থেকে সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছি। তার বিনিময়ে যেটুক পাওয়ার কথা সেটুকু পাইনি, তাহলে শুধু শুধু কেন তাদেরকে এভাবে পীড়ন করছি? পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর আমি চিত্কার চেঁচামেচি করে আবিষ্কার করেছি সরকার কোনো সমালোচনা শুনতে রাজি নয়, তারা নিজেদের মত সিদ্ধান্ত নিতে থাকবে। এই দেশের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত্ হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ- যারা দেশের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেবেন তারা কি ছেলেমেয়েদের সত্যিকারের অবস্থাটা জানেন? দোহাই আপনাদের কাছে, এই দেশের ছেলেমেয়েদের শৈশব থেকে আনন্দটুক কেড়ে নেবেন না।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

(ওএস/অ/নভেম্বর ২১, ২০১৪)