বিশেষ প্রতিনিধি : এক সময়ে ভারতীয় ভিসা সংগ্রহের জন্যে দালাল(মধ্যস্বত্ত্বভোগী) হয়ে ওঠে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। দালালদের কাছে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা ধরিয়ে দিয়ে পাসপোর্ট জমা দিলে ভিসা পাওয়া যেত; অন্যথায় ভিসা পাওয়া যেত না। ভারতীয় দূতাবাস এদেশের ভিসা প্রত্যাশীদের 'দালাল' যন্ত্রণা নিরসনে ই-ফরম প্রথা চালু করেন। অর্থাৎ ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটাল।

বলা হ’ল, ভিসা আবেদনকারী ই-ফরম পূরণ করলেই একটি তারিখ পাবেন, ওই তারিখে পাসপোর্ট জমা দেবেন; নির্দিষ্ট সময় পর ইচ্ছুক ব্যক্তি ভিসা পেয়ে যাবেন। কিন্তু হায়! বর্তমানে ই-ফরম পূরণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে টাকা না দিলে পাসপোর্ট জমা দেয়ার তারিখ বা ই-টোকেন পাওয়া যায় না। আবার কখনও কখনও ভিসা না দিয়েই পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয়। যার কারণও ভিসা অফিস ব্যাখ্যা করে না।

ভারতীয় ভিসা সংগ্রহ করতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন এমন ভুক্তভোগীরা জানান, সকলের কম্পিউটার না থাকায় তারা ই-ফরম পূরণকারী কম্পিউটার অপারেটরের কাছে যান। বছরখানেক আগেও পঞ্চাশ টাকা থেকে একশ’ টাকার বিনিময়ে ফরম পূরণ করে পাসপোর্ট জমা দেয়ার তারিখ পাওয়া যেতো। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। প্রথম প্রথম পাসপোর্ট জমা দেয়ার তারিখ দুই মাস থেকে তিন মাস পর পড়তে শুরু করে। পরে বলা হতে থাকে, অন-লাইনে ফরম মিলছে না; ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোন এক সময় আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টার জন্যে সার্ভার পাওয়া যায়; এভাবে ফরম পূরণের জন্যে অনেক টাকা দিতে হবে। এই টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পেতে এখন তিন হাজারে ঠেকেছে। তারপরও অনেকে ই-ফরম পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন না।

অত্যধিক টাকা নেয়া প্রসঙ্গে একাধিক ই-ফরম পূরণকারী কম্পিউটার অপারেটর জানান, তারা একাধিক কম্পিউটার ২৪ ঘন্টা অন-লাইনে রেখে 'তীর্থের কাকের' মত অপেক্ষায় থাকেন। যখনই অন-লাইনে ফরম ওপেন হয়, তখনই পূরণ করেন। এভাবে কখনও কখনও ২৪ ঘন্টায় একটি ফরম পূরণ করা যায়; কখনও কখনও একটি ফরম পূরণ করতে ৪৮ ঘন্টারও প্রয়োজন হয়। এজন্যে আমাদের খরচও বেড়ে যায়। যে কারণে বাধ্য হয়েই আমরা ভিসা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে বেশী টাকা নিই।

দাকোপের ভিসা প্রত্যাশী দিবাকর মন্ডল বলেন, অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা করাতে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে তিনি একজন কম্পিউটার অপারেটরকে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে দুই মাস পরে সিরিয়াল পেয়েছিলেন। ছয়শো টাকা সহ পাসপোর্ট জমা দেন। বাইশ দিন পর পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয়, তবে ভিসা ছাড়াই! কেন ভিসা দেয়া হ’ল না তার কারণও তারা বলেনি।

এ ব্যাপারে পাসপোর্ট জমা নেয়া প্রতিষ্ঠান স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার খুলনা শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা শুধুমাত্র পাসপোর্ট জমা নিয়ে থাকি। আমরা ই-ফরম বিষয়ে যেমন কিছু জানিনা, তেমনি ভিসা দেওয়া বা না দেওয়া সম্পর্কেও কিছু জানিনা।

(ওএস/অ/নভেম্বর ২২, ২০১৪)