স্টাফ রিপোর্টার : অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে দায়ী করা চরম পরিহাস বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, অপহরণ, গুম ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করায় সরকার চরম পরিহাস ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু এখন দেশে ১৯৭৪-’৭৫ সালের মতো অপহরণ, গুম, হত্যার ঘটনা ঘটছে। আজ এই দেশে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই। যিনি অপহরণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তার লাশ পরিবার পাবে কীনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

“এই অবস্থার মধ্যেও সরকার বলছে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এটি চরম পরিহাসের বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে এসব ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে, যা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন।”

এ ধরনের চাতুরি না করার জন্যও ফখরুল সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত জনগণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরকার ব্যবহার করছে। ফলে এসব বাহিনী সফলতা পাচ্ছে না। বিএনপি এ অবস্থায় নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারে না।

এ সময় তিনি ১০টি সতর্কবার্তা তুলে ধরেন-
১. বিএনপির জন্য আমাদের পরামর্শ হচ্ছে প্রত্যেকের আওতাধীন এলাকায় লিফলেট, পোস্টার, সভা, মতবিনিময়সহ বিভিন্ন পন্থায় অপহরণ, খুন, গুম হত্যা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন এবং এসব অপরাধের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

২. চলাফেরায় সতর্ক থাকুন, একা চলাচল ও নির্জন ও অনিরাপদ স্থানগুলো এড়িয়ে চলুন।

৩. নেতাকর্মী সবাই মিলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। যতদূর সম্ভব পারস্পারিক যোগাযোগ বজায় রেখে চলুন।

৪. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থানীয় ফোন নম্বর ও যোগাযোগের ঠিকানা সংগ্রহে রাখুন। কোএনা ঘটনা ঘটলে দ্রুত তাদের জানান এবং দলের নেতাকর্মীদের ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দিন।

৫. বিএনপির সদর দপ্তরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। প্রতিটি ঘটনা কেন্দ্রকে জানান।

৬. কোথাও অপহরণ পরিকল্পনার খবর পেলে যতোবেশি সম্ভব বেশি লোক মিলে দ্রুত সেখানে উপস্থিত হোন এবং মিলিতভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করুন।

৭. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কাউকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে তাদের পরিচয় সম্পর্কে এবং আটক ব্যক্তিকে কোথায় নেয়া হচ্ছে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।

৮. আটক ব্যক্তিকে কোথায় নেয়া হচ্ছে সেখানে সবাই মিলে গিয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলুন এবং কী অভিযোগে, কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করুন। কবে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে তাও জেনে নিন। পারলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিন।

৯. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিলে তাদের প্রতিরোধ করুন এবং পুলিশে খবর দিয়ে তাদের হাতে তুলে দিন।

১০. আক্রান্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান এবং তাদের বিবরণ সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরুন। গুম, অপহরণ ও খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থানীয় ভিত্তিতে গ্রহণ ও পালন করুন। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলুন।

এর আগে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য- আর এ গণি, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, বেগম সরোয়ারি বেগম, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর হাফিজ উদ্দিন, সাদেক হোসেন খোকা ও সেলিমা রহমান প্রমুখ।

(ওএস/এটি/মে ০২, ২০১৪)