রীয়তপুর প্রতিনিধি :৮ মাস ব্যাপী জাটকা শিকারের সরকারী নিষেধাজ্ঞা জারির সাথে সাথে শরীয়তপুরে পদ্মা-মেঘনায় জেলেরা অবাধে নির্দয়ভাবে শিকার করছে শিশু ইলিশ বা জাটকা।

আর এই নিষিদ্ধ জাটকা কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত ও বিক্রি করা হচ্ছে । প্রতিদিনি শরীয়তপুর জেলার হাট বাজার গুলো সয়লাব হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট ইলিশের পোনা বা জাটকা মাছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে জাতীয় সম্পদ ধ্বংসযজ্ঞ চললেও রহস্যজনক কারনে নীরব থাকছেন তারা।

১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির ছোট ইলিশ (জাটকা) ধরা, বিক্রয়, মজুত ও পরিবহনের উপর নিষেদ্ধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। কিন্তু সরকারী এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর সুরেশ্বর থেকে মেঘনার জালালপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী অবাধে চলছে ৩ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৭ ইঞ্চি আকারের লক্ষ লক্ষ জাটকা নিধনের মহা উৎসব। আর এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এসব জাটকা প্রকাশ্যে বিক্রয় করা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে। সরকারের কোন সংস্থা জাটকা নিধন বন্ধের অভিযান এখনো শুরু না করায় জেলেরা দিন-রাত নদীতে জাল ফেলে শিকার করে চলেছে রাষ্ট্রীয় এই সম্পদ। তবে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, শরীয়তপুরে ইলিশ আহরনের অন্যতম এলাকা গোসাইরহাট উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ ও সিরাজুল ইসলামকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে অন্তত ২৫টি আড়তের মালিকেরা জাটকা শিকার করে তা বাজারজাত করছে। তবে কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ এ অভিযোগ পুরোটাই অস্বিকার করেন।

সরেজমিন জেলার গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা মেঘনায় গিয়ে দেখা গেছে রাত-দিন জেলেরা শত শত ছোটবড় নৌকা নিয়ে জাটকা শিকারে করছে। জেলে রফিক উদ্দিন, নোয়াবালি বেপারী, দাদন মিয়া জানান, তারা অভাবের কারনে, এনজিও এবং দাদন ব্যবসায়ীদের কিস্তির টাকা জোগার করতেই জাটকা ধরা বে-আইনী জেনেও এই অপরাধ করছে। বাদশা শেখ ও আবুল কালাম বলেন, জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী সহায়তা জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়-স্বজনেরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে যায়, তাই আমরা জাটকা ধরছি। আবার কেউ নিজেদের দোষ এড়াতে বলছে, বড় ইলিশ ধরতে এসে জালে ছোট ইলিশ আটকা পরছে। সরকারের আইন মান্য করে জাটকা না ধরারও অঙ্গিকার করেছেন কেউ কেউ।
স্থানীয় কাজীরহাট বাজারের মাছ বিক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, পাইকারদের কাছ থেকে আড়তদারেরা জাটকা সংগ্রহ করে। সেই জাটকা আমরা বাজারে খুচরা বিক্রি করি। ক্রেতারা বেশি দরে বড় ইলিশ কিনতে পারেনা বলেই কম টাকায় জাটকা কিনে নেয় ।
গোসাইরহাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা মাছ বিক্রির বিভিন্ন আড়ৎ ও জেলে পল্লীতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে জেলেদের জাটকা নিধন থেকে বিরত রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মৎস বিভাগে কম জনবলের কারনে অভিযান চালাতে পারছেন না বলেও জানালেন তিনি।

শরীয়তপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা কাজী ইকবাল আজম বলেন, জাটকা শিকারের তথ্য আমাদের জানা নেই। তার পরেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা জাটকা শিকার করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন হরা হবে।

জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষার্থে এখনই জাটকা নিধনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এক সময় হয়ত হারিয়ে যাবে দেশের ঐতিহ্য রুপালী ইলিশ। তাই দরিদ্র জেলেদের পাশাপাশি অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী বলে মনে করেন সচেতন সমাজ।

(কেএনআই/এসসি/নভেম্বর২৩,২০১৪)