কয়েকদিন হল বইমেলা শেষ হয়েছে৷ তোমরা কমিকস আর নতুন গপ্পের বই কিনেছো, খবর পেয়েছি৷ আজ থেকে এখানে মাঝে-মধ্যে আমরা এমন কিছু বই আর লেখকের খোঁজখবর দেব, যা পুরনো হয়েও চিরনতুন৷ লিখছেন নিবেদিতা দাঁ

স্কুলে বা পাড়ায় তো অনেক বন্ধু আছে তোমাদের৷ তাদের বাইরে আজ অন্য আর একটি বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়ার কথা মনে হল৷ তোমাদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে হয়ত ইতিমধ্যে এদের পরিচয় হয়েছে, দু'-একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ত বেশ গাঢ়৷ তবে যাদের সঙ্গে এখনও আলাপপর্ব সেভাবে জমেনি, তাদের জন্যেই রইল সেই সব বিশেষ বন্ধুদের হদিশ৷ তারা আর কেউ নয়, দু'মলাটের ঠিকানায় থাকা কিছু শব্দ৷ নাম নানা রকম হলেও, তাদের সবার পদবি কিন্তু এক৷ এই বন্ধুর নাম হল, বই৷

বিখ্যাত সাহিত্যিক আরনেস্ট হেমিংওয়ে একবার বলেছিলেন, 'There is no friend as loyal as a book'৷ কেন? বলছি৷ আচ্ছা একটা কথা বল তো আমাকে, বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে কত বার কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছ? বা হয়ত নতুন ক্লাসে উঠে সে তোমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছে? খারাপ লেগেছে তো তখন? কিংবা রাগ হয়েছিল খুব? এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক৷ কিন্ত্ত আজ যে বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব, সেই বন্ধু তোমাদের ছেড়ে কখনও যাবে না৷ বরং একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে তার হাত ধরে তোমাদের বন্ধুমহলে যোগদান করবে আরও অনেকে৷ আর সব থেকে মজার কথা কী জানো? এই সব বন্ধুদের পরস্পরের মধ্যে কোনও ঝগড়া নেই৷

শুরু করা যাক কিছু ইংরেজি বই দিয়ে৷ না, হ্যারি পটারের কথা বলছি না৷ সে সব তো পড়তেই পারো৷ কিন্ত্ত ক্লাসিকস পড়ার ব্যাপারই আলাদা৷ শুরুর দিকে একটু বোরিং লাগতেই পারে, তবে একটু ধৈর্য ধরে পড়লে দেখবে আস্তে-আস্তে বন্ধুত্ব গভীর হচ্ছে৷ ক্লাসিক লিটারেচারের তালিকায় নাম রয়েছে বহু বিখ্যাত সাহিত্যিকের৷ তার মধ্যে থেকেই তোমাদের সুবিধের জন্যে বেছে দিলাম কয়েকটি নাম৷ একবার এই বন্ধুর সঙ্গে আলাপ জমে গেলে দেখবে নিজের তাগিদেই খুঁজে নেবে আরও অনেককে৷

তোমাদের মধ্যে কতজন লুইস ক্যারল-এর নাম শুনেছ? নামটা চেনা চেনা লাগলেও ঠিক মনে আসছে না? আচ্ছা ঠিক আছে৷ অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড নামটির সঙ্গে তো নিশ্চয়ই পরিচিত? হ্যাঁ, এই সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখার স্রষ্টা হলেন লুইস ক্যারল৷ তো যা বলছিলাম৷ 'অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড' তোমরা এতদিনে নিশ্চয়ই পড়েছ৷ না পডে় থাকলে এখনই পড়ে ফেলো৷ তবে এর পাশাপাশি আরও একটি বইয়ের হদিশ তোমাদের দেব৷ 'সিলভি অ্যান্ড ব্রুনো'৷ দুটি খণ্ডে এই উপন্যাসটি শেষ করেছিলেন লুইস ক্যারল৷ প্রথম ভাগ, 'সিলভি অ্যান্ড ব্রুনো' প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে৷ দ্বিতীয় ভাগের নাম 'সিলভি অ্যান্ড ব্রুনো কনক্লুডেড'৷ প্রকাশিত হয় ১৮৯৩-এ৷ ওমা! ওরকম নাক কুঁচকালে চলবে? মানছি একশ বছরেরও পুরনো লেখা৷ কিন্তু তাতে কী? একবার ভেবে বল তো আজ থেকে ৮০-৯০ বছর পরে হ্যারি পটারও তো পুরনো হয়ে যাবে৷ তা বলে বইটার দু'মলাটের মধ্যে যে জাদুর ছোঁয়া আছে সেটা কি ভ্যানিশ হবে? হবে না৷ এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক এক৷

না, পুরো গল্প এখানে মোটেই বলব না তোমাদের৷ ইংরেজিতে একটা কথা আছে ব্লার্ব৷ অর্থাত্‍, পুরো গল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা৷ বাস্তব আর রূপকথার মিশেল রয়েছে দু'খণ্ডের এই উপন্যাসে৷ প্রথম খণ্ডের প্লট বা কাহিনী বিস্তার করেছে ভিক্টোরিয়া যুগের বাস্তব সময়ের প্রেক্ষাপটে৷ অন্যদিকে দ্বিতীয় ভাগটি খানিকটা অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের ধাঁচে৷ রূপকথার রাজ্যে বহু আপাত অবাস্তবের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে সমকালীন সমাজ৷ রয়েছে ধর্মের টানাপোডে়ন, সামাজিক নিয়মকানুন, তত্‍কালীন দর্শন এবং অবশ্যই মূল্যবোধ৷ এই উপন্যাসটির বিভিন্ন স্তর আছে৷ এখন পড়লে অবশ্য এত খটমট ব্যাপার তোমরা বুঝতে পারবে না৷ তবে হলফ করে বলতে পারি, রূপকথার হাতছানি তোমরা কখনওই এড়াতে পারবে না৷

এবার নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করছে এই বই পাবে কোথায়? কোনও চিন্তা নেই৷ এখন তো বহু অনলাইন বুকস্টোর আছে৷ মা বা বাবাকে বলো৷ দেখবে নিমেষে সেই সবই স্টোর থেকে পেয়ে যাবে এই বইটি৷