ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে বাল্য বিবাহের প্রবণতা দিন দিন আশংকাজনক হারে বাড়ছে। ফলে বিয়ের পর কিছুদিন সংসার করার পর বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার হয়ে মেয়েরা বাবার বাড়িতে দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে উপজেলার ছলিমপুর, সাহাপুর ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে অশিক্ষিত বিত্তহীন পরিবারগুলোতে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ঈশ্বরদীর কয়েকটি গ্রামে অভিভাবকরা তাদের কন্যা সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হয়ে হাই স্কুলে যেতে না যেতেই পাত্রস্থ করেন। ফলে এরা সংসার কি- তা বোঝার আগেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নাজেহাল হয়। অল্প বয়সে সন্তান ধারণ করে এরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে।

উপজেলার কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, ১২ থেকে ১৬ বছরের অধিকাংশ মেয়ে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে ঝড়ে পড়ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের দারিদ্র যেখানে নিত্য সঙ্গী, সেখানে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা তাদের কাছে অবাস্তব চিন্তা। তাদের মতে মেয়েদের যত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া যায় ততই মঙ্গল। আবার কতিপয় অভিভাবক সীমাহীন দারিদ্র থেকে মুক্তি এবং সামাজিক মর্যাদা যাতে ক্ষুন্ন হতে না পারে সে জন্য অল্প বয়সে মেয়েকে পাত্রস্থ করে। অপরিণত বয়সে এই সব মেয়ে গর্ভধারণ করে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে নানা রকম ভোগান্তির স্বীকার হয়। ফলে অল্প বয়সী মেয়েরা বউ হিসাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে স্বামীর সংসারে লাঞ্চনার শিকার হয়। এসব কারণে অনেক মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিভিন্ন গ্রামে বিয়ের মজলিশে দেখা যায় অধিকাংশ পাত্র-পাত্রীর বয়স ১৮ বছর এর নিচে। অথচ রেজিষ্ট্রাররা অর্থের বিনিময়ে সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করছেন। বাল্য বিয়ে অপরাধ হলেও এই আইন মানা হচ্ছে না। ঈশ্বরদীতে এক্ষেত্রে বিয়ের বয়স নিশ্চিত করতে স্কুল মাদ্রাসার ছাড় পত্র নেওয়ার বিধান চালু করলেই সহজে বয়স নিরুপন করা সম্ভব হবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ছলিমপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের বাদশা ফকির তার ১৪ বছরের শিশু কন্যা (শারমিন) কে পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়নে ৩০ বছর বয়সি এক যুবকের সঙ্গে বিয়ের দিন ঠিক করেন। পুলিশ তা জানতে পেরে বিয়ে ভঙ্গ করে দেন এবং মেয়ের বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নেন। শারমিনকে বাল্য বিয়ে দেয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর একদিন পরেই বাদশা পাবনায় নিয়ে তার মেয়েকে ওই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেন। এরপর পুলিশ বাদশা মিয়াকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধমে সাত দিনের জেল প্রদান করেন।

(এসকেকে/পি/নভেম্বর ২৯, ২০১৪)