চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : চলনবিলের রুহুল বিলে বাউত (মাছ ধরতে পলো নিয়ে হাজার লোকের সমাবেশ) নামায় ৫০ মেট্রিক টন মাছ খোয়া গেছে বলে ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। শনিবার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া, তাড়াশ, আশপাশের উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পলো দিয়ে ‘বাউত উৎসব’ এ বিলে মাছ ধরে।

উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রত্যেক ব্যক্তি গড়ে ৩ কেজি মাছ ধরেছেন। যার আনুমানিক মূল্য ৬০ লক্ষ টাকা। মাছগুলো দেশি প্রজাতির এবং বেশির ভাগ শোল, বোয়াল ও রুই।

ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাশে রুহুল বিল ৭৯ একর জায়গা নিয়ে অবস্থান। এখানে বিপন্ন প্রজাতির দেশি শিং, মাগুর, গুলসা টেংরা, চিতল, স্বরপুঁটি, নয়না ও কৈ সহ প্রভৃতি মাছের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। এসব প্রজাতির মা মাছ রক্ষার জন্য শুকনো মওসুমে রুহুল বিলের ৫ একর জায়গায় সারা বছর পানি থাকার উপযোগী খনন করে অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে গত বছর বাংলাদেশ-জার্মান সরকারের সহযোগিতায় একটি জলাভূমি জীববৈচিত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্প (ডব্লিউবিআরপি) বাস্তবায়ন করা হয়। এলাকার সুফলভোগি প্রায় ৩’শ মৎসজীবি রয়েছেন যারা সরকারের নিকট থেকে প্রতিবছর বিলটি ইজারা নেন। কিন্তু বাউত নেমে মাছগুলো ধ্বংস করে ফেলছে। তারাও মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হলেন।

এলাকাবাসী জানান, বন্যার পানি নেমে যাবার পর শত বছর ধরে রুহুল বিলে সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার সকালে কয়েক হাজার লোক সমবেত হয়ে পলো, ফাঁস জাল ও নানারকম সামগ্রী নিয়ে মাছ শিকার করেন।


ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, খরা মওসুমে বিল শুকিয়ে যাওয়ায় এখন সেখানে উফসী জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়। কিন্তু বন্যার সময় বিলে সরকারিভাবে দেশি মাছের পর্যাপ্ত পোনা অবমুক্ত করা হয়। ফলে এখানে মা মাছের ভান্ডার গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। সেই সাথে গৃহিত হয় ডব্লিউবিআরপি প্রকল্প ও বিলের মধ্যে নির্মাণ করা হয় মাছের অভয়াশ্রম।

তিনি বলেন, শনিবার সকালে ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, চাটমোহর ও আটঘরিয়াসহ আশপাশের উপজেলার ২০/২৫ হাজার লোক (বাউত) একযোগে বিলে মাছ ধরতে নামেন। তারা বিপুল পরিমান মাছ শিকার করেন। বাউতের তারা খেয়ে ঐ অভয়াশ্রম এখন মা মাছে পরিপূর্ণ। তিনি বলেন আগামী মঙ্গলবার আবার বিলে বাউত নামবে। তাই তাদের হাত থেকে অভয়াশ্রমের মা মাছগুলো রক্ষার জন্য সকলের প্রতি তিনি আহবান জানিয়েছেন।

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামছুল আলম বলেন, অভয়াশ্রম রক্ষায় ইতোমধ্যে স্থানীয় অধিবাসীদের সচেতনে এলাকায় ব্যাপক মাইকিং করা হয়েছে পাশাপাশি বিষয়টি পাবনার জেলা প্রশাসনকেও অবহিত করা হয়েছে।

(এসএইচএম/এএস/নভেম্বর ৩০, ২০১৪)