নারায়ণগঞ্জে একের পর এক অপহরণ, হত্যা ও গুমের ঘটনায় সারাদেশের মানুষ উৎকণ্ঠিত এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সরকার এ অপহরণ, হত্যা, গুমের দায় এড়াতে পারে না সে ব্যাপারেও আমাদের দ্বিমত নেই। আমাদের দ্বিমত আর হতাশার জায়গাটি হলো, অবস্থা ও সময় ভেদে অনেকের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর কৌশলের ভিন্নতা নিয়ে।

গত বছরের শেষের দিকে আন্দোলন সংগ্রামের নামে বিএনপি-জামায়াত প্রকাশ্যে ও ‘গুপ্তহত্যা’র স্টাইলে মানুষ আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। আজ নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় দেশের বিশিষ্টজনেরা যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, গত বছরের শেষ দিকের মানুষ পুড়িয়ে নৃশংস হত্যার ঘটনার সময় আমরা তাদের বিবেককে সেভাবে জাগ্রত হতে দেখিনি। তাদের প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়ার ধরণে যদি অবস্থা ও সময় ভেদে ভিন্নতা না থাকতো, তবে তাদের প্রতিবাদের গুরুত্ব আরো বেশী অর্থবহ ও কার্যকর হতো।

নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর যারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাদের বেশীরভাগই সরকারকে দায়ী করে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির দিকে সন্দেহের তীর ছুড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এই সন্দেহের তীর ছুড়ে দেয়া একেবারেই ধারণা প্রসূত এবং অনেক ক্ষেত্রেই সরকার ও সরকারি এজেন্সিগুলোকে বিব্রত করবার অপকৌশল বলেই মনে হওয়া স্বাভাবিক।

বেশ কিছুদিন ধরেই বিএনপি-জামায়ত নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনার নামে অন্ধকার পথের নানা অপতৎপরতার কথা বলছেন, যা ‘গুপ্তহত্যা’ পরিচালনারই ইঙ্গিত দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের বিশিষ্টজনেরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে ওইসব রাজনৈতিক নেতাদের ভয়ঙ্কর সব হুমকি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেন না। এমনকি সরকারি এজেন্সিগুলোও ওইসব বক্তব্যকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে থাকে বলেও মনে হয় না।

আমরাও অপহরণ, হত্যা, গুমের বিচার চাই। কিন্তু এজন্যে সরকারই দায়ী-এ দৃষ্টি ভঙ্গিরও পরিবর্তন চাই। আমরা বিশ্বাস করি, দৃষ্টিভঙ্গির উদারতা না থাকলে প্রতিবাদের ভাষা একসময় অকার্যকর হতে বাধ্য হবে। বাস্তবে হচ্ছেও তাই।