কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারে গত সপ্তাহে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকদফা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। আর এতে ৬ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। আর আহত হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সহ ১০/১২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারপরও থেমে নেই ইয়াবা ব্যবসা। আর এ পাচারে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে পাচারকারীরা।

সূত্র জানায়, ইয়াবা পাচার রোধে কক্সবাজারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বর্তমানে হার্ড লাইনে রয়েছে। প্রশাসনের এ অবস্থানের কারণে ইয়াবার চিহ্নিত গডফাদাররা আত্মগোপনে চলে গেছে। কিন্তু ইয়াবা ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়ে গেছে নতুন একটি সিন্ডিকেটের উপর। ১২ জনের এই সিন্ডিকেটে রয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী সহ স্বর্ণ চোরাকারবারীরা। এদের প্রত্যেকের আত্মীয়- স্বজন ইয়াবা ব্যবসার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলায়ের তালিকায় নাম রয়েছে জাতীয় সংসদের কক্সবাজার-৪ আসনের সাংসদ আব্দুর রহমান বদির ৩ ভাই আবদুর শুক্কুর, মৌলভী মুজিবুর রহমান ও আবদুল আমিন, রমজান আলী প্রকাশ একটেল রমজান, টেকনাফ উপজেলা জাফর আহমদের ছেলে মোস্তাক আহমদ ও দিদার হোসেন এমপির ঘনিষ্ঠ স্বজন পিচ্চি আনোয়ার,টেকনাফ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন, টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি একরামুল হক মৌলভি বোরহান, সিরাজ মিয়া, সামসুন্নাহার ওরফে জ্যোতি, আবদুল্লাহ হাসান, নুরুল আমিন, সৈয়দ আলম, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, জহির, জাফর নূর আলম, আবদুুর রহমান, তৈয়ব মিয়া, কবির আহমেদ ওরফে ইয়াবা কবির, ইব্রাহিম, আলম, নূর মোহাম্মদ, জামাল, ছোটন, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল্লাহ, জাকির হোসেনসহ কক্সবাজারের ১ হাজার ২শত ২০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম।

এদের মধ্যে ইয়াবার গড়ফাদার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৬৯ জনকে। এদেরকে জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হণ্য হয়ে খুঁজছে। এ কারনে তালিকাভুক্তরা সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। আর তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে নতুন মুখ। ১২ জনের একটি সিন্ডিকেটের হাতে দায়িত্ব দিয়ে গড়ফাদাররা আড়ালে থেকে ইয়াবা ব্যবসা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ১২ জনের কাজ হচ্ছে মায়ানমার থেকে ইয়াবা এনে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে নমনীয় করা। এমনই তথ্য দিযেছে পুলিশ প্রশাসনের একটি সূত্র।

ওই সূত্রের দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং এলাকার এমদাদুল হকের পুত্র দেলোয়ার হোসেন ও টেকনাফ পৌরসভার নামার পাড়ার মৃত অংছেং এর পুত্র মংমংছেকে প্রধান করে ১২ জনের সিন্ডিকেটটি গড়া হয়েছে। ৪ বছর আগে বিদেশে সর্বস্ব খুইয়ে টেকনাফ ফেরে দেলোয়ার হোসেন । এলাকায় পৌছে বেকার বসে থাকে মাস ছয়েক। এরই মাঝে টেকনাফের কোলার পাড়ার তার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের যোগসাজসে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা ব্যবসায়। পর্দার আড়ালে থেকে ইয়াবা ব্যবসা করে এলাকায় গড়ে তোলে আলীশান বাড়ি। সে টেকনাফের সাবরাং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত যত পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা আসে সব পয়েন্টেরই ইয়াবা গ্রহন করে । পরবর্তীতে এই ইয়াবা পেীছে দেয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাতে।

অন্যদিকে এক সময়ের স্বর্ণ চোরকারবারী মংমংছে ও বছর পাচেক আগে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। এ ব্যবসায় এসে টেকনাফের স্থানীয় সাংসদ আব্দুর রহমান বদির বাড়ির পাশে নিমার্ণ করে অভিজাত দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। গড়ে তোলে কোটি টাকার সম্পত্তি আর চলে আসে এমপির সু-দৃষ্টিতে । আর টেকনাফের সদর সব পয়েন্টের ইয়াবা ব্যবসার দায়িত্ব পালন করে মংমংছে। পর্দার আড়ালের এ ২ ব্যবসায়ীকে ইয়াবা পাচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । ইয়াবা পাচারের এই দুঃসময়ে দায়িত্ব পাওয়া এই ২ জনকে সহযোগিতা করছে আরো ১০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। এদের হাত ধরেই নানা কৌশলে এখনো ইয়াবা পাচার অব্যাহত রয়েছে। নতুন নতুন মানুষ, নতুন পথের মাধ্যম্যে ইয়াবা পাচার অব্যাহত রেখেছে নতুন সিন্ডিকেট।

কক্সবাজারের টেকনাফে ২ মে ৬১ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-৪২) সদস্যরা। এসময় একটি ট্রলারও জব্দ করা হয়। এর আগে ৩০ এপ্রিল বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিক্সা তল্লাশি করে সাড়ে ৪ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ।

এ সময় ইয়াবা পরিবহনের দায়ে নতুন ২ মুখ সদর ইউনিয়নের কেরুনতলী এলাকার কামাল হোসেনের স্ত্রী সানজিদা (৩০) ও লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার মধুপুর এলাকার মৃত মুজিবুল হক পাটোয়ারীর ছেলে সৈয়দুল হক পাটোয়ারী (৪৮)ও আটক করা হয়েছে।

২৮ এপ্রিল ১ হাজার ৯ শ ৯০ টি ইয়াবা সহ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালির ইউনুছ আলীর স্ত্রী মিনুয়ারাকে আটক করেছিল বিজিবি। আটককৃতদের দেওয়া তথ্যমতে নতুন এই সিন্ডিকেটে সম্পর্কে জানতে পেরেছে পুলিশ প্রশাসন।

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তার আহমেদ জানিয়েছেন, ইয়াবা পাচার এখনো বন্ধ হয়নি বিষয়টি সত্য। তবে অনেকটা কমেছে। অতিদ্রুত টেকনাফকে ইয়াবামুক্ত করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

টেকনাফস্থ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ( বিজিবি ) ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আবুজার আল জাহিদ জানিয়েছেন, পাচার কিছুটা কমলেও এখনো বন্ধ হয়নি ইয়াবা ব্যবসায়ীর দৌরাত্ব্য। তবে খুব শ্রীঘই কক্সবাজার ইয়াবা মুক্ত হবে বলে তিনিও দাবী করেছেন।

(টিটি/এটি/মে ০৩, ২০১৪)