ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে চর দখল নিয়ে থেমে গেছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও খুনোখুনি। পদ্মার বুকে জেগে উঠা বিশাল চরে কৃষকেরা এখন মনের আনন্দে ফসল ফলাচ্ছেন। কৃষাণীরাও বসে নেই। মাঠ হতে কেটে আনা সোনারঙের ধান ঝেড়ে-বেছে গোলায় তোলায় ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছে। তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

রবিবার সরেজমিন ঈশ্বরদীর পদ্ম নদীর তীরবর্তী লক্ষীকুন্ডা চর এলাকার কামালপুর, দাদাপুর, চরকুড়–লিয়া, শান্তিনগর ও ডিগ্রী চরের বিস্তির্ণ এলাকা ঘুরে এই প্রশান্তির চিত্র দেখা গেছে। চরের জমি দখল নিয়ে দীর্ঘদিন হতে একাধিক পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছিল। দখল- বেদখল, লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে অন্যের লাগানো ধান কেটে নেয়া এসব নিয়ে এই এলাকায় প্রতি বছরই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, খুন-খারাবির ঘটনা ঘটতো। সর্বশেষ ২০০৯ সালে কামালপুর চরে জমিতে মশুর তোলা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ জন প্রাণহানি ঘটে। মামলায় হয় দুই পক্ষের আসামীও হয় অর্ধ শতাধিক। খুনের মামলায় জড়িয়ে বাড়ির পুরুষেরা ঘর ও পরিবার পরিজন ছেড়ে জেল হাজতে অথবা পালিয়ে ফিরতো। মামলায় কেউ কেউ শেষ সম্বল ভিটে-মাটি হারিয়ে সর্বহারা হয়েছে। তবে ২০০৯ সালের পর চরের জমি নিয়ে লক্ষীকুন্ডায় আর কোন সংঘর্ষ বাধেনি।

এলাকাবাসী জানান, বর্তমান ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বার বার গ্রামে এসে উদ্যোগ নেয়ায় গত ৩-৪ বছর থেকে চরের পরিবেশ শান্ত। দ্বন্দ্ব-বিবাদ ভুলে এখন তারা কৃষি আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। জমি বন্দোবস্ত নিয়ে প্রান্তিক কৃষকেরা সেই জমিতে ধানের পাশাপাশি লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, শসা, ঝিঙে, করল্লা, পেঁপে, গাজর, ওল কপি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, ধনিয়া পাতা সহ বিভিন্ন শাকসবজি ও আখ, মশুর, খেসারি, ছোলা, গমসহ নানা ফসল ফলাচ্ছেন।

এসব বিক্রি করে প্রান্তিক কৃষকেরা ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। কয়েক হাজার কৃষক এই আবাদের সাথে জড়িত। বিশাল এই চরের জমির মাঠ জুড়ে চোখে পড়ে শুধু সবজি আর ফসল । এসব নানা রং ও স্বাদের সবজি ও ফসল সোনার মত দামি মনে হয় কৃষকের কাছে। চরকুরুলিয়ার কৃষক সের আলী প্রামানিক জানান, চরের এই জমিতে এখন সোনা ফলছে। তারা মারামারি বিভেদ ভুলে চাষাবাদে মন দিয়েছেন। হাফিজুর রহমান জানান, তিনি জমির মালিকের কাছ থেকে ২ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে গত তিন বছর ধরে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করছেন। এবারও এই জমিতে মিষ্টি ও চালকুমড়া লাগিয়েছে। আবাদ হয়েছে ভাল। আফজাল মোল্লা জানান, চরের জমিতে চাষ করে তিনি এখন অনেকটা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তার বর্গা নেয়া ৬ বিঘা জমিতে এবছর প্রচুর সবজির আবাদ হয়েছে। তবে উৎপাদনের বেশি হওয়ায় বাজারে তুলনা ভাল দাম পাচ্ছেন না।

লক্ষীকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুল হক মোল্লা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধের জন্য একই গ্রামের অধিবাসী সংসদ সদস্য ও ভূমি মন্ত্রী’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, আগে চরের জমিতে তেমন চাষাবাদ হতো না। ৩-৪ বছর ধরে চর এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে। অসংখ্য কৃষক সবজি ও ফসল চাষাবাদ করে ঝুকে পড়েছেন। তারা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, লক্ষীকুন্ডায় নদী ভাঙ্গনে জেগে উঠা চরের জমি রয়েছে ৬১২৮.১০ হাজার একর। এর মধ্যে এ বছর আবাদ যোগ্য ১০৪৪.২৭ একর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। নদীর জেগে উঠা জমির মালিকরা চাষাবাদের জন্য প্রান্তিক কৃষকদের বাৎসরিক ভাবে বন্দোবস্ত দিয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খুরশিদ আলম জানান, লক্ষীকুন্ডার চরে দিন দিন আবাদ বাড়ছে। এখান প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে ২টি সবজি হাট বসে। প্রচুর বেচাকেনা হয়। অল্পদিনেই এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক কৃষকেরা সাবলম্বি হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

(এসকেএস/এএস/ডিসেম্বর ০১, ২০১৪)