কুমিল্লা প্রতিনিধি : ঈদ উল আযহার সময় কুমিল্লার চকবাজারে ১৩ টি গরু বিক্রি করে বাড়ি ফিরছিলেন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কংশনগর এলাকার ব্যবসায়ী খোকন মিয়া। সাথে ছিল গরু বিক্রির সাড়ে ৭ লাখ টাকা। ৫ অক্টোবর রাতে ১২ টার দিকে বাড়ি আসছিলেন তিনি। কিন্তু গত দুই মাসেও তার আর খোঁজ নেই। খোকন মিয়ার পুরো পরিবার ঈদের দিন থেকে তাঁকে খুঁজতে থাকে নানা স্থানে। তার মা সুফিয়া বেগম (৭০) গভীর রাতেও খোঁজে বেড়ান প্রিয় ছেলেকে। ৬ সন্তানের জননী খোকনের স্ত্রী কুলসুম বেগম তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা প্রহর গুণতে গুণতে প্রতিদিনই জড়াচ্ছেন চোখের অশ্রু। উপায় না দেখে থানায় করেছেন সাধারণ ডায়েরি। আদালতে করেছেন মামলা। গরু বিক্রির পূর্বে যারা তাকে হুমকি দিয়েছিল এবং পূর্ব থেকে যাদের সাথে বৈরিতা চলছিল তাদের নামে দায়ের করেন এ মামলা।

খোকন মিয়ার স্ত্রী কুলসুম বেগম জানান, আমার স্বামী কুমিল্লার কংসনগরের ঈদগাহ বাড়ির মৃত সুন্দর আলীর ছেলে খোকন মিয়া (৪৪)র দু’মাসের ধরে কোন খোঁজ পাচ্ছি না। ৫ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের চকবাজার গরু হাটে ১৩ টি গরু বিক্রি করে সাড়ে সাত লাখ টাকা সাথে নিয়ে শহরের রাজগঞ্জ পর্যন্ত আসে। এরপর থেকে তার আর খোঁজ নেই। আমার স্বামী আমাকে মোবাইলে জানিয়েছিল এলাকায় যাদের সাথে আমাদের শত্রুতা, তারা তাকে অনুসরন করছে। যারা এর আগে গরু বিক্রি করে কিভাবে বাড়ি ফিরে তা দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়েছিল। এ ব্যাপারে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। যার নং-২৯৭। কিন্তু এখনও কোন খোঁজ খবর দিতে পারেনি পুলিশ। পরে আদালতেও আমি মামলা করেছি। মামলায় আসামিরা হলেন কংশনগর এলাকার মো: নজির আহাম্মদ, মো: খোরশেদ আলম, মো: আবুল হোসেন, মো: লিটন মিয়া, মো: জুয়েল ও মো: ইউনুস মিয়া।

তিনি জানান, খোকন মিয়ার সংসার চালানোর একমাত্র উপার্জনের উৎস পিক আপ ভ্যান দিয়ে সংসার চালাতো। তাও কিস্তিতে নেওয়া। এখন কিস্তি পরিশোধ না করার কারণে হাতছাড়া হয়ে যায়। আমরা এখন দিশেহারা। জানা গেছে, খোকন মিয়ার ৬ সন্তানদের মধ্যে সবার বড় মেয়ে শাহিনা আক্তারের বিয়ে হয়েছে কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার মুকচাইল এলাকায়। অপর সন্তান ছেলে আনিছ, রুহুল আমিন, জোনাঈদ, মেয়ে সানজিদা। তারাও তাদের বাবাকে ফিরে পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। বড় ছেলে আনিস মিয়া জানান, গত দুই মাসে বাবার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। বাবার মতো কেউ খোঁজখবর নেয়না। আমরা এখন এতিম হয়ে আছি। দু বছর বয়সি মেয়ে সাজিদা মার কান্নার দেখে সেও কেঁদে উঠেন।

নিখোঁজের পরিবার অভিযোগ করে জানান, আমাকে কেউ সহযোগিতা করছে না। আমার স্বামীর সন্ধান করতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নিতে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ করে ফেলেছি। এখন আমি আর টাকাও খরচ করতে পারছি না। আমি আমার স্বামীকে ফিরে পেতে চাই।
এ দিকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দায়ের করা নিখোঁজ খোকনের স্ত্রী কুলসুম বেগমের মামলাটি তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য আদালত গোয়েন্দা পুলিশের ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায় নি।

(এইচ/পি/ডিসেম্বর ০৩, ২০১৪)