রাজশাহী প্রতিনিধি : সোনালী ব্যাংকের রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট শাখায় সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ডাকাতির চেষ্টা চালানো হয়েছে। তবে জনসাধারণের তৎপরতায় ব্যর্থ হয়েছে ডাকাতদল।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহানগরীর আদালত পাড়া সংলগ্ন এলাকার সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় এই ডাকাতি চেষ্টার খবরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত খুনতি, বেলচা, দা, ছেনি, সাবল, হাতুড়ি, করাতসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, সোনালী ব্যাংক রাজশাহী কোর্ট শাখার ভবনটি প্রধান সড়কের পাশে কোর্টের প্রাচীর ঘিরে অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়। তার কিছু দূরেই রয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দফতর।

প্রত্যক্ষদর্শী মহানগরীর বুলনপুর এলাকার মৃত আবুল হোসেন সরকারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে এশার নামাজ শেষে ব্যাংকের পেছনের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। ব্যাংকের কাছে পৌঁছামাত্র তিনি মাটি খোঁড়ার আওয়াজ পেয়ে দাঁড়িয়ে যান। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকের সামনে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত নিরাপত্তাকর্মীদের জানান।

কিন্তু নিরাপত্তা কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই দুর্বৃত্তরা সুড়ঙ্গের ভিতর থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়। তবে যাওয়ার সময় ফেলে রেখে যায় সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত খুনতি, বেলচা, দা, ছেনি, সাবল, হাতুড়ি, করাতসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। পরে খবর পেয়ে রাজপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপরই সেখানে র‌্যাব সদস্যরা পৌঁছে। পরে পুলিশ সুড়ঙ্গের ভিতর গিয়ে সেগুলো উদ্ধার করে।

এদিকে, সীমানা প্রাচীর ঘেষে কদমের গাছের নিচে সুড়ঙ্গটির মুখ করা হয়েছে প্রায় আড়াই থেকে তিন ফিট ব্যাসার্ধের। কয়েকটি কাঠ ফেলা ছিল। পাশে ছিল একটি পুরনো ব্লাক বোর্ড।

সোনালী ব্যাংক শাখার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার হাসান আবদুল্লাহ বলেন, অল্পের জন্য হয়তো রক্ষা হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মোবাইল ফোনে জানতে পারেন যে, ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা চালানো হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, এ ঘটনায় ব্যাংকে রক্ষিত টাকাসহ সব ধরনের নথিপত্র সুরক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে হাসান আবদুল্লাহ বলেন, সোনালী ব্যাংক কোর্ট শাখার এ ভবনটি পুরনো এবং অনেকটাই অরক্ষিত। যেহেতু এই ভবনটি জেলা পরিষদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে ভবনটি মেরামতের জন্য জেলা পরিষদ কর্ত‍ৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

মহানগরীর রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার এ দু’দিন ছুটির মধ্যেই ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা হয়তো করে রেখেছিল ডাকাত দলের সদস্যরা। যেভাবে সুড়ঙ্গ কাটা হচ্ছিল, তাতে স্থানীয়রা বিষয়টি টের না পেলে রবিবারের আগেই হয়তো ব্যাংক লুট হয়ে যেত। ঘটনার সঙ্গে বড় চক্র জড়িত আছে। জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরী বলেন, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে নিরাপত্তকর্মীদের সংবাদ দেয়। ব্যাংকের ভল্ট ঘরের বাইরের দেয়াল ও বাইরের প্রাচীরের মাঝে প্রায় দুই ফিট গভীর পর্যন্ত খুঁড়তে পেরেছিল তারা। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্তের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৪)