শেরপুর প্রতিনিধি : মামলায় জর্জরিত শেরপুর জেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে তৃণমূল থেকে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলের ভেতর গণতান্ত্রিক চর্চা চালু করতে নেতা নির্বাচনে তৃণমুলের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। প্রথমেই শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপি’র ইউনিয়ন কমিটিগুলো গঠন করা হয় তৃণমূল নেতাদের সরাসরি গোপন ব্যালটের ভোটের মাধ্যমে।

৫ ডিসেম্বর শুক্রবার লছমনপুর ও রৌহা ইউনিয়নের আহ্বায়ক ও ১ নং যুগ্ম-আহ্বায়ক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন কমিটি গঠনের কাজ। দুপুরে শহরের রঘুনাথ বাজার এলাকায় বিএনপি নেতা রুবেলের বাসভবন চত্বরে এ তৃণমুল নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এসময় জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল, সদর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মো. হযরত আলী, বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম স্বপন, মো. শহিদুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ পলাশ, আব্দুর আউয়াল চৌধুরী প্রমুখ নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচিত নেতারা আগামী ৭ দিনের মধ্যে ৫১ সদস্যের পূর্নাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবেন। এ কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের সভাপতি ও সম্পাদকসহ মোট ১৮ জন ভোটার গোপন ব্যালটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচিত করেন। নির্বাচিত আহ্বায়ক ও ১নং যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন-১নং কামরের চর ইউনিয়নের মো. চাঁন মিয়া ও সিরাজ আলী, ২ নং চর শেরপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী ও আব্দুস সালাম, ৩নং বাজিতখিলা ইউনিয়নের সুলতান আহম্মেদ ও মাহবুবুল হক লেবু, ৪নং গাজির খামার ইউনিয়নের গোলাম মোস্তাফা টেট্টন, ৫নং ধলা ইউনিয়নের জয়নাল আবেদীন ও মিজানুর রহমান বাবু, ৬নং পাকুরিয়া ইউনিয়নের আব্দুল হালিম সরকার ও সওকত জামান রিপন, ৭নং ভাতশালা ইউনিয়নের আল আমীন ও আব্দুল করিম, ৮নং লছমনপুর ইউনিয়নের সুলতান আহম্মদ ও শহিদুল ইসলাম, ৯নং চর মুচারিয়া ইউনিয়নের আব্দুর হামিদ ও এনামূল হক, ১০নং চর পক্ষীমারি ইউনিয়নের মো. শাহনেওয়াজ ও আক্রাম হোসেন জিন্না, ১১নং বলাইচর ইউনিয়নের মঞ্জুরুল হক বাদল ও বেলাল হোসেন, ১২নং কামারিয়া ইউনিয়নের লুৎফর রহমান ও সেলিম মিয়া, ১৩নং রৌহা ইউনিয়নের আক্কাস আলী ও মো. হেলাল উদ্দিন এবং ১৪নং বেতমারী-ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন ও হাবিজুর রহমান।

জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মাহমুদুর হক রুবেল জানান, পূর্নাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি পরবর্তিতে ৪৫ দিনের মধ্যে ৭১ সদস্যের পূর্নাঙ্গ ইউনিয়ন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া করবেন। তবে সেই পূর্নাঙ্গ কমিটিও পূর্বের ন্যায় ৯ ওয়ার্ডের সকল সদস্য অর্থাৎ ৪৫৯ জন ভোটার গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচন করবেন। নির্বাচিত সভাপতি-সম্পাদকরা পরিবর্তিতে পূর্নাঙ্গ (৭১ সদস্য) কমিটি গঠন করবেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করছেন উপজেলা কমিটি’র গঠিত নির্বাচন কমিটি। এভাবে পর্যায়ক্রমে জেলার সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, উপজেলা কমিটিরও একইভাবে তৃণমূল ভোটারদের ভোটে নেতা নির্বাচন করা হবে।

এদিকে বিএনপি’র এ দলীয় ভোট উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক ইউনিয়নের ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দ্বারে দ্বারে ছুটায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মূলায়ন বেড়ে যাওয়ায় ওইসব তৃণমূল নেতারাও উজ্জিবিত হয়ে উঠেছেন। দলের একাধিক তৃণমূল নেতা জানায়, দীর্ঘদিন পরে হলেও বিএনপিকে শক্তিশালী করতে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাতে তৃণমুলের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন বাড়ার পাশাপশি দলে ভেতর গণতন্ত্র চর্চা ফিরে এলো। এতে দল সর্বদায় শক্তিশালী থাকবে এবং দুর্দিনের নেতাদের মূল্যায়ন করার সুযোগ হয়। তবে এ ধারাবহিকতা সর্বশেষ জেলা কমিটি গঠন পর্যন্ত ঠিক থাকলে শেরপুর জেলা বিএনপি একটি মডেল হবে বলে তারা মনে করেন।

এ ব্যাপারে শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মো. হযরত আলী জানান, বিএনপি একটি গনতন্ত্রিক দল। এ দলের ভেতর গণতন্ত্র চর্চা হবে না, তা হতে পারে না। গত এক সপ্তাহে আমি আমার উপজেলার সকল ইউনিয়নের কমিটি গঠন করেছি সম্পূর্ন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। এখানে আমার অনেক কাছের লোকও নেতা নির্বাচিত হতে পারেনি। কিন্তু এতে আমি মন:ক্ষুন্ন নই। আমি চাই শেরপুরে বিএনপি দলের ভেতর গণতন্ত্র চর্চা ফিরে আসুক এবং কেন্দ্র ও দেশের মানুষ জানুক বিএনপি গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে, এক নায়কতন্ত্রে নয়।

(এইচবি/এএস/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৪)