আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : সম্প্রতি বরিশালে নারী শিক্ষার্থীদের উপর পুরুষ পুলিশের হামলার ঘটনায় যখন গোটা দেশে আলোচনা-সমালোচনা চলছে ঠিক তখন বরিশাল নারী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নীরব ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন তারা।

ঘটনার ৪ দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি কোন শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেয়নি এখানকার নারী নেত্রীরা বা মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এ অবস্থায় ওই সব সংস্থাগুলোর কার্যক্রম অর্থাৎ স্বচ্ছতা নিয়ে সচেতন মহলে নানামুখি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব ও নেতাদের ভূমিকা নিয়েও এখন সকলের কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিগত দিনে সংগঠনগুলোকে নিজেদের পরিচয় এবং কার্যবিধি জানান দিতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মাঠে নানা কর্মসূচী পালন করে নারী অধিকারের প্রশ্ন তুললেও এবার তারা নিশ্চুপ। যে কারণে পুলিশী নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে এসব নারীবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে অনেকেরই প্রশ্ন এবার সেই সব নারী অধিকারের সংস্থা অর্থাৎ সংগঠকরা কোথায় ?

জানা গেছে, বরিশালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা’ (এনজিও) আভাস, বিএনডিএন ও মহিলা পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন নারীবাদী সংগঠন নারীর অধিকারে বিদেশী অর্থায়নে কাজ করে আসছে। বিগত সময়ে এসব সংগঠনগুলোকে নারী মুক্তির বানী নিয়ে মাঠেও কাজ করতে দেখা যায়। কিন্তু তাদের সভা-সমাবেশ বা মানববন্ধন ছাড়া ব্যক্রিধর্মী কর্মসূচীতে দেখা মেলে না কখনও। তবে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। নারী শিক্ষার্থীর উপর বর্বোরোচিত হামলার প্রতিবাদে ওই সব কর্মসূচী তো দূরের কথা পুলিশী হামলার শিকার আহত নারী শিক্ষার্থীর সহানুভুতিও জানায়নি সংগঠনগুলো। এই সব বেসরকারি সংস্থগুলোর মতো একই অবস্থা এখানকার মানবাধিকার কমিশনের নেতা কর্মীদেরও। যে কারণে সংস্থাগুলোর জন্য দাতা সংস্থাদের দেয়া অর্থ ব্যয়ের হিসেব নিয়েও জন্ম দিয়েছে নানান প্রশ্নের।

ঘটনায় প্রকাশ, ১০ দফা দাবিতে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে বরিশালে আন্দোলন করে আসছিল। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে নগরের বান্দ রোডে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে এক পর্যায়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা চালায়। এসময় বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. শাখায়াত হোসেনের নেতৃত্বে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা অতর্কিত লাঠি চার্জ করলে ২২ নারী ও ১০ ছেলে শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।

অবশ্য এসময় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে ২৩ জনকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে আখি আক্তার, আদিপ, আরিফ হোসেন, সুরাইয়া নাসরিন, আখিনুরসহ ৬ শিক্ষার্থী এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, শিক্ষার্থী আঁখি, সুরাইয়া মেরুদন্ডে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। যে কারণে তাদের সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।

আহত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশের নগ্ন হামলার ঘটনায় মানবাধিকার কমিশন তো দূরের কথা নারী অধিকারের যেসব সংস্থা কাজ করে তাদের কারোর দেখা মেলেনি এসব আহত শিক্ষার্থীদের পাশে। এঘটনায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১০ দফার যৌক্তিক দাবি আদায়ে আন্দোলন চলবে। পাশাপাশি এই নগ্ন হামলার ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে যাবেন তারা। এদিকে হামালার ঘটনার প্রতিবাদে বরিশালে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজীর (আইএইচটি) শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ ও কালো ব্যাচ ধারণ করে করে আসছে। এসময় তারা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা এখানকার অনেক সংস্থার ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বিশেষ করে মানবাধিকার কমিশন, মানবাধিকার সংস্থা, মহিলা পরিষদ ও এনজিও আভাস’র ভুমিকা তাদের হতাশ করেছে বলে উল্লেখ করেন।

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের উত্তর খুঁজতে আভাসের বরিশাল অফিসের নিবার্হী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল বলেন, বেশ কয়েক দিন যাবত রাজধানীতে অবস্থান করছেন যে কারণে বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল নন। ঢাকা থেকে বরিশাল ফিরে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে মাঠে নামবেন বলে উল্লেখ করেন।

(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৪)