হলুদ ফুলে সুশোভিত মাঠ
চাটমোহর থেকে শামীম হাসান মিলন : হলুদ ফুলে সুশোভিত মাঠে ভ্রমর পাখা মেলেছে। ভ্রমরের গুঞ্জনে কৃষকের মন আলোড়িত। মধু আহরণে মৌমাছিরাও মেতে উঠেছে। পাবনার চাটমোহর উপজেলার গ্রাম-গ্রামান্তরে ফসলের মাঠ ভরে উঠেছে সরিষার আবাদে।
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুলের সমাহার। রবি মৌসুমের ফসল এই সরিষা সুস্বাদু খাদ্য তৈরিতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। বাঙালীর রসনা বিলাসে সরিষার ব্যবহার শুরু হয়েছে বহুকাল আগে থেকেই। সরিষা ইলিশের কদর তো বাংলার ঘরে ঘরে।
আবার সরিষা নিয়ে গ্রামগঞ্জে ভূত-পেতের গল্পও চালু আছে। ভূত ছাড়াতে সরিষার ব্যবহার অনিবার্য হয়ে উঠে কবিরাজের কাছে। ষড় ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়ারও পরিবর্তন ঘটে। শীত মৌসুমের শুরুতেই সুরষার আবাদ লক্ষ্য করা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবছর চাটমোহর উপজেলায় সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪শ’ ৫০ হেক্টর। মোট আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে উপশী, মাঘী জাতের সরিষা রয়েছে। গত বছরে আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে।
উপজেলার নিমাইচড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিনি মোট ১৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। ১শ’ মন সরিষা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো দানের আবাদ করেও কিছু লাভ থাকবে।
চরসেন গ্রামের আরেক কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, মাঘী সরিষা উত্তোলনের পর সে জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়। ফলন ভাল হলে বিঘা প্রতি ৪/৫ মন মাঘী সরিষা পাওয়া যায়।
আলাপকালে বরদানগর গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার ও হযরত আলী জানান, রবি মৌসুমে সরিষা কৃষকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফসল। সরিষার আবাদের ঝুঁকি, খরচ এবং পরিশ্রম কম। এ কারণেই কৃষকরা সরিষা আবাদে বেশি আগ্রহী হন।
উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের কৃষক আব্বাস আলী ও আব্দুল কাদের জানান, সাধারণত নদী-বিল তীরবর্তী এবং অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় সরিষার আবাদ বেশি হয়। এক সময় এ অঞ্চলের কৃষকরা শুধু ইরি-বোরো ধানের এক ফসলি আবাদ করে হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত ফেলে রাখত।
কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারা বিগত প্রায় দেড় যুগ ধরে পতিত জমিতে ইরি-বোরো, আমন, ভূট্টা, তরমুজ ও সরিষার আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। এবছর পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার কারণে আগাম সরিষার চাষ করা সম্ভব হয়েছে বলে তারা জানান।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রওশন আলম জানান, কৃষকদের মাঝে সময়মতো সরিষার বীজ, সারসহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক মাঠে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন।
সরিষা একটি লাভজনক ফসল। সরিষা চষের ফলে ওই জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলনও হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি জানান।
(এসএইচএম/এএস/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৪)