আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া একজন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও আজ আমরা সেই অর্জনটুকু কাজে লাগাতে পারছিনা। বাবার স্বীকৃতি থাকলে খুব সহজে সেটিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের কর্মসংস্থান তৈরি হতো। অথচ অনেক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা নামিদামী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন।

কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মো. আবুল কাসেম খানের বড় ছেলে রাসেল খান জাহিদ ও তার একমাত্র ছোট ভাই সোলায়মান খান বিপ্লব।

তারা আরও বলেন, বাবা তার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন প্রাণপন চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হয়ে মারা গেছেন। মা’ও মারা যান সম্প্রতি। এখন আমরা দু’ভাই বেকার অবস্থায় পথে পথে ঘুরে বেড়ালেও বাবার স্বীকৃতির অভাবে কোন কর্মসংস্থানে যোগদান করতে পারছিনা। রাসেল খান জাহিদ এইচএসসি ও তার ছোটভাই সোলায়মান খান বিপ্লব বিএ পাশ করেছেন।

তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা কাসেম খান ১৯৯৬ সালের ৬ জুন মারা যাওয়ার পর অর্থাভাবে তাদের একমাত্র বোন ইভা খান বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। এরপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় তাদের পড়াশুনা। এখন তারা দু’ভাই বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ফলে তারা তাদের মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্বীকৃতি পেতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সূত্রমতে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাবেহরামপুর ইউনিয়নের ক্রোকিরচর গ্রামের মো. আবুল কাসেম খান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে স্থানীয় মুজিব বাহিনীর কমান্ডার জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে পাকহানাদার প্রতিরোধে সম্মুখযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সে হিসেবে মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক (বর্তমান বাণিজ্য মন্ত্রী) তোফায়েল আহম্মেদের স্বাক্ষরিত সনদপত্রও রয়েছে তার। এছাড়াও তার সহযোদ্ধারা এখনো রয়েছেন জিবীত।

দেশ স্বাধীনের পর জনতা ব্যাংকের ঢাকার ডি.আই.টি কার্যালয়ের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকায় ঢাকায়ই তাদের বসবাস ছিলো। কাসেম খান তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেও হয়েছেন ব্যর্থ। তার মৃত্যুর পর কাসেম খানের স্ত্রী জীবন নেছা খানম মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন করেও স্বামীর ন্যায় ব্যর্থ হয়েছেন। সম্প্রতি তিনিও (জীবন নেছা) পৃথিবী ছেড়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন।

সম্প্রতি বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভূক্তির জন্য অনলাইনের মাধ্যমে পুনরায় কাসেম খানের ছেলেরা আবেদন করেছেন।

(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৪)