আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় পাঁচ শতাধিক ইটভাটায় ইট তৈরির মৌসুম শুরুতেই আকস্মিক ভাবে কয়লা সঙ্কটের কারণে বিপাকে পড়েছেন মালিক ও শ্রমিকরা। কয়লার অভাবে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সিংহভাগ ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হওয়ায় পথে। এতে করে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

নগরীর আলী ব্রিকসের স্বত্তাধীকারি আলী হোসেন জানান, ভারত থেকে রফতানি বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে কয়লার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে একমাত্র কয়লা সঙ্কটের কারনে মৌসুম শুরু হওয়ার একমাস অতিবাহিত হলেও ইট পোড়ানোর কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছেনা। সিগমা ব্রিকসের মালিক দীলিপ দাস গুপ্ত জানান, ১৫ দিন ধরে কোনো মোকামেই কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রতি টন কয়লার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

তিনি আরো জানান, আগে এক টন কয়লার দাম ছিল আট হাজার টাকা। অথচ কয়েক দিন আগে সাড়ে ১২ হাজার টাকা দরে কিনেছেন তিনি।

এশিয়া ব্রিকসের মালিক নজরুল ইসলাম জানান, সঙ্কটের কারণে কয়লার দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারমতে পরিবেশ অধিদফতরের নির্দেশ অনুযায়ী জিগজাগ ইটভাটা ছাড়া অন্য কোনো ভাটা চলতে পারবে না। জিগজাগ ইটভাটায় জ্বালানির একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কয়লা। তিনি বলেন, বেশি দামে কয়লা ক্রয় করলে ইটের দামও দ্বিগুণ হবে। ফলে ভাটা মালিকদের নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে। এমতাবস্থায় বরিশাল বিভাগের পাঁচ শতাধিক ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর কার্যক্রম এখনো শুরু করা যাচ্ছে না।

বরিশাল ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আহম্মেদ রোমান জানান, সারাদেশেই কয়লা সঙ্কট চলছে। প্রতিটি ইট ভাটায় কয়েক’শ করে শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ইট পোড়ানো শুরু করতে না পারায় ওইসব শ্রমিকদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান জানান, কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আসন্ন মৌসুমে ইটের দাম দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় গণপূর্ত অধিদফতরের অধীনে উন্নয়নকাজে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে। ইটের মূল্যবৃদ্ধিরোধে জরুরি ভিত্তিতে কয়লা সঙ্কটের সমাধান করার জন্য তিনি বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস কয়লা সঙ্কটের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দেশেই ২’শ থেকে ৩’শ টন কয়লার মজুদ রয়েছে। ইটপোড়ানো মৌসুম শুরু হওয়ায় কয়লার আমদানিকারকেরা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ সুযোগে ইটভাটার মালিকেরা কাঠ পোড়ানোর পাঁয়তারা শুরু করেছেন। তবে ইটভাটায় কোনোভাবেই কাঠ পোড়ানোর সুযোগ দেয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৪)